টাঙ্গাইলের প্রাণী হাসপাতাল

পশু-প্রাণীর ‘অধিকার’ একটি  আধুনিক ধারণা। আগেকার দিনে এই ধারণাটি কাগজে–কলমে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। পৃথক মন্ত্রণালয় অথবা এ–সংক্রান্ত আইনের তো প্রশ্নই ছিল না। অথচ তখনো অবলা প্রাণীর ওপর অত্যাচার যে পাপ, সেই স্বাভাবিক বোধটুকু যথেষ্ট জোরালো ছিল। এখন অবলাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দেশে এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নামে মন্ত্রণালয় রয়েছে। গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন আছে। জেলা–উপজেলা পর্যায়ে পশু হাসপাতালও আছে। কিন্তু তারপরও পশু–পাখির রোগশোক উপশমে মানবিক গরজের যথেষ্ট ঘাটতি দৃশ্যমান। অন্তত টাঙ্গাইলের দুটি প্রাণী হাসপাতালের বর্তমান চিত্রে এটিই ধরা পড়ছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অন্য প্রাণী হাসপাতালগুলোর সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, টাঙ্গাইল জেলা প্রাণী হাসপাতাল এবং সদর উপজেলার সন্তোষ এলাকায় অবস্থিত পীর শাহজামান প্রাণী হাসপাতালে দোতলা ভবন রয়েছে। ভবনের ভেতরে আছে প্রয়োজনীয় আসবাব, চিকিৎসাসামগ্রী। কিন্তু দুটি হাসপাতালেই নেই কোনো চিকিৎসক। ফলে
দীর্ঘদিন ধরে পশু–পাখি পালনকারীরা তাঁদের প্রাণীর চিকিৎসাসেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, জেলা প্রাণী হাসপাতালটিতে ১১ বছর ধরে ভেটেরিনারি সার্জন নেই। হাসপাতালের অফিস সহকারী ও অ্যানিমেল অ্যাটেনডেন্ট প্রেষণে অন্যত্র রয়েছেন। একজন কম্পাউন্ডার ও একজন অফিস সহায়ক চালাচ্ছেন হাসপাতালটি। আর পীর শাহজামান প্রাণী হাসপাতালটি অঘোষিতভাবে কার্যক্রমবিহীন রয়েছে। সেখানে চিকিৎসক, কম্পাউন্ডারসহ কোনো পদে লোক নেই। অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে আছে হাসপাতালটি। সদর উপজেলা প্রাণী হাসপাতালের ড্রেসার পদবির একজনকে এখানে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকার পরও শুধু চিকিৎসক পদায়ন না করায় পশু–পাখি হাসপাতাল দুটিতে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। হাসপাতাল দুটিতে চিকিৎসক থাকলে এই এলাকার পোলট্রি খামারিরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতেন। এ ছাড়া রোগাক্রান্ত সাধারণ গৃহপালিত পশু–পাখিদেরও চিকিৎসা করানো যেত। 

হাসপাতাল দুটির অবস্থা দেখে ধারণা করা যেতে পারে, শুধু কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবে স্থানীয় পশু ও প্রাণী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেহেতু অবকাঠামো ও সব চিকিৎসা সরঞ্জাম এখানে রয়েছে, তাই এখানে চিকিৎসক ও অন্যান্য পদে জনবল পদায়ন করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। ১১ বছর ধরে একই অবস্থা থাকা দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, জনবল নিয়োগে সংশ্লিষ্টদের গরজের অভাবই মূল সমস্যা। 

পশু–প্রাণীরও অধিকার থাকতে পারে—এই বোধটি ‘মানুষ’ নামক শ্রেষ্ঠ জীবটি যদি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে দিন শেষে মানুষেরই ক্ষতি। এই সত্যটি সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরই আগে উপলব্ধি করতে হবে।