নাটোরে ৩১ বিদ্যালয়ে মাঠ নেই

দুই পাশে গাদাগাদির বসতবাড়ি। বিদ্যালয় ভবন থেকে বের হলেই হয় গলি, নয় বড় রাস্তা। খেলাধুলার জন্য একচিলতে জায়গাও নেই। কখনো কোনো খেলার আয়োজন করলে খুদে পড়ুয়াদের অন্য এলাকার মাঠে নিয়ে যেতে হয়। সেটাও নয় মাসে-ছয় মাসে দু–একবার। তার মানে প্রায় গোটা বছরই খেলা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় শিশুদের। 

এই অসহায় অভিন্ন ছবি নাটোর শহরের প্রায় সব কটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেখানে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু ৩১টিতেই শিক্ষার ‘স্বাস্থ্য’ রক্ষার আবশ্যিক শর্ত খেলাধুলার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আর এখানেই শিক্ষাকে শ্রেণিকক্ষের চার দেয়ালের গণ্ডি ছাপিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আধুনিক ধারণা হোঁচট খাচ্ছে।

শিক্ষাকে ‘বাইরে নিয়ে যাওয়া’ মানে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া, প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাওয়া, পশুপাখির ডেরার কাছে নিয়ে যাওয়া এবং অবশ্যই আক্ষরিক অর্থে মাঠ, অর্থাৎ খেলার মাঠের কাছে নিয়ে যাওয়া। শিশু পড়ুয়াদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ যে মাঠ, সেই মাঠের অভাব নাটোরের শিশুদের কাছে সবচেয়ে বড় হতাশার কারণ হয়ে উঠেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, শহরে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৩টি। এ ছাড়া ২০টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন আছে, যার ১৮টিতেই শিশুদের সময় কাটে চার দেয়ালের ভেতর। এগুলোর কোনো কোনোটি চলছে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনের কক্ষ ভাড়া করে। অনেক বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর শিক্ষার্থীদের হাঁটাহাঁটির জায়গাও নেই। মাঠ না থাকায় ইচ্ছা করলেও খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। এ নিয়ে শিশুদের মন খারাপ হয়। 

শিশুদের বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকার ক্ষতিকর প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান হয় না। বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা একসঙ্গে মিলে খেলে। এর ফলে মানসিকভাবে তারা অনেক সুগঠিত হয়। সুসংগঠিত হয়। এর সঙ্গে শিশু মনস্তত্ত্বের নিবিড় যোগ আছে। মাঠের অভাবে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, তারা কেউ প্রকৃত সামাজিক হয়ে উঠতে পারে না, যা দীর্ঘ মেয়াদে সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

শুধু নাটোরেই যে বিদ্যালয়গুলোয় মাঠ নেই, বিষয়টি তা নয়; সারা দেশেই কমবেশি এ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হচ্ছে কোনো ভবন ভাড়া করে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘কিছুই করার নেই’ বলে গা বাঁচালেও সরকারের দিক থেকে তাদের সমর্থন করা ঠিক হবে না। শহর এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার শর্ত হিসেবে বড় মাঠ না হোক, অন্তত একটু নিশ্বাস ফেলার মতো আঙিনা থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।