সিলেটে নিরাপদ সবজি কর্নার

কৃষি মন্ত্রণালয় সব জেলায় একটি করে নিরাপদ বা বিষমুক্ত সবজির দোকান থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর সিলেটে নিরাপদ সবজি কর্নার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সবজিচাষিদের প্রতিনিধিরা ছিলেন। যেই কৃষক আমাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ খুবই কম। এ কারণে আমরা সিলেট জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

ওই মতবিনিময় সভায় সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন সবজি কর্নার প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে জেলা উৎপাদক সংগঠনের সহসভাপতি মো. সৈয়দুর রহমান খেতের সবজি সরাসরি সবজি কর্নারে বিক্রয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এতে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ে লাভবান হবেন। সবজি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দোকান বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে। শুধু দোকান বরাদ্দ কেন, সরকারের সব কাজেই মানুষ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আশা করে।

ধান, মাছ, মাংস, ফলের পাশাপাশি সবজি চাষেও বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বিশ্বে আমাদের অবস্থান তৃতীয়। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানি করছে, যার মধ্যে আছে আলু, হিমায়িত সবজি, করলা, মুখীকচু, কচু, কচুর লতি, মিষ্টিকুমড়া, শিমবিচি, পটোল, কাঁচা মরিচ, লাউ, চালকুমড়া প্রভৃতি।

সবজির উৎপাদন বাড়লেও উৎপাদনকারী অর্থাৎ সবজিচাষিরা খুব লাভবান হচ্ছেন না। তাঁদের অনেকে জানেনই না উৎপাদিত পণ্যটি কোথায় কার কাছে বিক্রি করবেন। ঢাকায় যে বেগুন কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বগুড়ায় উৎপাদক পাচ্ছেন তার চার ভাগের এক ভাগ দাম। এর অর্থ লাভের গুড় প্রায় পুরোটা মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যায়। এটি আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার বড় দুর্বলতা। নিরাপদ সবজি কর্নার প্রতিষ্ঠিত হলে চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যটি সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন।

তবে আমরা মনে করি, এ ধরনের নিরাপদ সবজির দোকান শুধু জেলা সদরে থাকাই যথেষ্ট নয়। উপজেলা সদরেও এটি ছড়িয়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদকেরা আরও বেশি লাভবান হবেন। অন্যদিকে ভোক্তারাও অপেক্ষাকৃত কম দামে টাটকা সবজি পাবেন। ভোক্তা যদি সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে সবজি কিনতে পারেন, তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীরা দাঁও মারতে পারবে না।

সরকারের এই নতুন উদ্যোগ আমাদের যেমন আশাবাদী করে তোলে, তেমনি শঙ্কাও জাগায়। কেননা, এর আগেও সরকারি উদ্যোগে সবজির কর্নার বা দোকান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেটি সফল হয়নি। এবারের উদ্যোগটি সফল হবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।