শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে

হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা (সা.) হলেন বিশ্বজগতের জন্য রহমত। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা: ‘(হে নবী! সা.) আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগৎসমূহের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (২১: ১০৭)।

ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল, আল্লাহর পেয়ারা হাবিব, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বিশ্বের সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মহামানব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম অনুকরণীয় আদর্শ।’ (৩৩: ২১)।

অনুরূপভাবে আল্লাহর প্রেরিত ও বার্তাবাহক হিসেবে সব নবী-রাসুলই সমান হলেও দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে, মর্যাদা ও সম্মানে সবাই সমান নন। নবুয়ত ও রিসালাতের প্রাথমিক পর্যায়ে যদিও সবাই সমান কিন্তু চূড়ান্ত শ্রেষ্ঠত্বে সবাই সমান নন। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা এই দুটি বিষয় এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা তাঁর রাসুলদের মাঝে পার্থক্য করি না।’ (২: ২৮৫)। ‘এই রাসুলগণ, তাঁদের মধ্যে কাউকে কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ তাঁদের মধ্যে এমনও কেউ রয়েছেন, যাঁর সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাউকেও উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। ‘মরিয়ম-তনয় ঈসা (আ.)-কে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছি ও পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) দ্বারা তাঁকে শক্তিশালী করেছি।’ (২:২৫৩)।

আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) সবার সেরা হয়েছেন সেরা গুণাবলির জন্য। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, উদারতা, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, দয়া-মায়া, মানবিকতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, পরোপকার ইত্যাদি সব মানবীয় সদ্‌গুণের অনন্য সমাহার ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা ইমান পরিপূর্ণতার পূর্বশর্ত। নবীজির আনুগত্য, অনুকরণ ও অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি আমার ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার নবীর অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন ও পাপরাশি ক্ষমা করবেন।’ (৩:৩১)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও ইমান পূর্ণ হবে না যদি সে আমাকে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা বেশি ভালো না বাসে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের কারও ইমান পূর্ণতা পাবে না, যতক্ষণ না তার স্বভাব-চরিত্র ও আচার-আচরণ আমার আনীত আদর্শের অনুগামী হবে।’ (মুসলিম)। ‘যে আমার সুন্নত আদর্শ অনুসরণ করে, সে-ই প্রকৃত আমাকে ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসবে, সে আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি)।

তিনি ছিলেন ‘আস সুদুকুল আমিন’। আস সুদুক অর্থ মহাসত্যবাদী, আল আমিন মানে বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসী। সত্যতা, সততা, ন্যায়বিচার, নিষ্ঠা, বিনয়, নম্রতা, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোরআনে কারিমে বিবরণ, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে উহা তার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। অতঃপর উহারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।”’ (৯: ১২৮-১২৯)

আমরা নবীর উম্মত! উম্মত মানে অনুসারী। কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে তাঁর অনুসরণ না করে উম্মত দাবি করা প্রহসন বৈকি। মূলত এই স্বভাববিরুদ্ধ দাবি আত্মপ্রবঞ্চনা ও প্রতারণা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। নবীর সঙ্গে উম্মতের সম্পর্ক বংশের নয়, দেশের নয়; আদর্শ ও বিশ্বাসের। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (৩৩: ৪০)

যেহেতু আমাদের নবীজি (সা.) শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব; তাই আমাদেরও হতে হবে শ্রেষ্ঠ উম্মত এবং কালের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তা না হলে নবীজি (সা.)-এর সুনাম ও সম্মানের প্রতি অন্যায় করা হবে। আমাদের হতে হবে খাঁটি নবীপ্রেমিক, নবীর সুন্নতের অনুসারী ও নবীর রঙে রঙিন। না হয় আমরা প্রকৃত অর্থে নবীর আশেক হওয়া দূরের কথা, নবীজির সত্যিকারের উম্মত হতে পারব না। যার কর্মকাণ্ডে ধর্মের দুর্নাম হয়, ইসলামের বদনাম হয়; মহামানবের সম্মানহানি হয়, মানবতার অকল্যাণ হয়, সভ্যতার অমঙ্গল হয়; সে ধার্মিক নয়, এমনকি মনুষ্যপদবাচ্য হওয়ারও অযোগ্য।

আসুন, শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে শ্রেষ্ঠ গুণের অধিকারী হই, ইসলামের অনুপম আদর্শ বিশ্বের দরবারে কার্যত তুলে ধরি এবং মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখি।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com