পাখির জন্য 'বাসা ভাড়া'

মহাকালের গলিত গর্ভে সেই পুরাকাল হারিয়ে গেলেও ব্যাধের পাখি বধ আজও থামেনি। এই আধুনিককালে এসেও বিনয় মজুমদারকে লিখতে হয়েছে, ‘মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’। আজও মানুষকে আপন ভেবে কাছে আসার খেসারত হিসেবে পৃথিবী থেকে বহু প্রজাতির পাখিকে হারিয়ে যেতে হচ্ছে। সম্প্রতি পরিযায়ী পাখির মানুষের কাছে আসা, কিছু মানুষের হাতে তাদের উচ্ছেদ হতে যাওয়া, উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষায় আদালত এবং প্রশাসনের এগিয়ে আসার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আশার কথা হলো, সেসব খবরে পরিযায়ী ক্রৌঞ্চ বধের চেষ্টার পাশাপাশি বধ প্রতিহতের মহান প্রচেষ্টাও উঠে এসেছে।

খবর অনুযায়ী, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের একটি আমবাগানের কিছু পাখির বাসা রক্ষায় আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জানা যাচ্ছে, আমবাগানটিতে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। চার বছর ধরে তারা এই বাগানে বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যায়। এবারও পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শেখেনি। কিন্তু বাগানের ইজারাদার বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে চান এবং গত মাসে তিনি কিছু বাসা ভেঙেও দেন। পরে স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের অনুরোধে তিনি পাখিদের ‘বাসা ছাড়ার জন্য’ ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন এবং এই খবরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। সে অনুযায়ী এখন পাখির বাসার জন্য বছরে এই টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। এই টাকা বাগানের মালিক বা ইজারাদারদের দেওয়া হবে। এতে কেউ পাখিগুলোকে তাড়াতে পারবে না। সরকার থেকে প্রতিবছর এই ব্যয় বহন করা হবে।

রাজশাহীর এই ঘটনা দেশের অন্যান্য এলাকায় আশ্রয় নেওয়া পরিযায়ী পাখিদের রক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। আম-কাঁঠাল-লিচুর মতো অর্থকরী গাছে পাখির দলবদ্ধ আবাসে গাছের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সরকারি উদ্যোগে যদি তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পাখিদের আবাস নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সত্যিকার অর্থে গোটা দেশই পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে পারে। এতে জাতীয় স্বার্থই সংরক্ষিত হবে।