সংযোগ সড়কবিহীন সেতু

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গাছ বয়ড়া জিয়া খালের ওপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাইকা বেড়িবাঁধ প্রকল্পের আওতায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু দুটি নির্মাণে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও কোনোটিরই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে আশপাশের ছয় গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে জিয়া খালে বছরের ছয় মাস বন্যার পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর সবাই খেতের সীমানা দিয়ে শহরে যাতায়াত করে। সংযোগ সড়ক না থাকায় কৃষকদের জমিতে উৎপাদিত ফসল বাড়িতে নিতে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।

শুধু সরিষাবাড়ীতে নয়, দেশের আরও বহু স্থানে এ রকম সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতু আছে। এসব সেতু বছরের পর বছর ধরে অব্যবহৃত থেকে নষ্ট ও পরিত্যক্ত হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মধ্যে অথবা লোকালয়বিহীন বিরান ভূমিতে, যেখানে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা মাঠে যাওয়া-আসা করেন জমির আইল দিয়ে, সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাধারণত কোনো জায়গায় সেতু নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদদের অনুরোধে। এটা অজানা নয় যে সব সরকারের আমলেই একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদার বিভিন্ন প্রকল্প বের করেন কমিশন আদায় করার জন্য। এঁরাই জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কলকাঠি নেড়ে সরকারি অর্থের নয়ছয়ের পথ করে দেন।

এসব সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমেই এ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। জনগণের করের অর্থ যাতে কেবল তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সে জন্য পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই সরিষাবাড়ীর দুটি সেতুসহ দেশের যেসব সেতুর সংযোগ সড়ক নেই, দ্রুত সেসব সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে সেতু দুটি এভাবে কেন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রইল, তারও একটি তদন্ত দরকার। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।