স্বাভাবিক প্রসবে পুরস্কার

পরিবারে বিত্তবৈভব বাড়লে কি স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা নারীদের কমে যায়? দেশের প্রধানত সচ্ছল পরিবারের প্রসূতিদের সিজারিয়ান প্রসবের প্রতি অতি ঝোঁক বছর কয়েক আগে পর্যন্ত এমন প্রশ্ন জাগাত। কিন্তু পরে দেখা গেল, মোটামুটি সচ্ছলতার মধ্যে থাকা, এমনকি দরিদ্র মেয়েদের মধ্যেও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ক্লিনিক নামধারী ছোটখাটো ওষুধের দোকানের মতো প্রতিষ্ঠানেও শিশুর জন্ম হচ্ছে ছুরি-কাঁচির সাহায্যে। অথচ সুরক্ষিত পরিবেশে অস্ত্রোপচার না হলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বহু আগেই সতর্ক করেছে। 

অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর হলো, এই প্রবণতা এখন কাটতে শুরু করেছে। বেসরকারি উদ্যোগে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে নারীর স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ছে। দেখা গেছে, এ বছর এসব হাসপাতালে ১০০ জনের মধ্যে ৬৫ জন গর্ভবতী মায়ের স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়েছে। অথচ আগের বছর ছিল এর উল্টো চিত্র। আরও আনন্দের কথা, এই ছবিটা ধীরে ধীরে রাজধানীর বাইরেও ছড়াতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে যাঁরা ভূমিকা রাখছেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক তাঁদের একজন। তিনি স্বাভাবিক প্রসবে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে অন্য সব এলাকার জন্য অনুসরণীয় একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে এসে স্বাভাবিক প্রসব করালে মায়েদের মিষ্টি ও নতুন কাপড় উপহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতেও সহযোগিতা করা হবে। 

নাহিদা বারিক গর্ভবতী মায়েদের জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে বিনা মূল্যে প্রসবসেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাই বাড়িতে প্রসব না করিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে এসে প্রসব করানোর জন্য তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মায়েদের প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুর পুষ্টি, গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং করণীয় বিষয় জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এই প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে একটি করে টেলিভিশনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। 

ইউএনও নাহিদা বারিকের এই চেষ্টা তৃণমূল পর্যায়ের সব কর্মকর্তার জন্য উদ্দীপনামূলক। স্বাভাবিক প্রসবে নারীদের আগ্রহী করতে তাঁর উদ্যোগ সবখানে অনুসরণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে আমরা আশা করব, প্রসূতি নারী ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে। সমাজে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়লে তা একটি চাপ হিসেবে কাজ করবে। আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন যে পাল্টাচ্ছে, তা এই সচেতনতারই ফল।