পৌর শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

গত সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনের খবর ছিল, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মতলব পৌর শহরের প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে। ছোট্ট মফস্বল শহরটির পাড়া-মহল্লার আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা, সেগুলোর সিংহভাগই গৃহস্থালি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর পচনশীল বর্জ্য পদার্থ। সড়কের মোড়ে মোড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে-পেছনে, বাজারসংলগ্ন জায়গায়, এমনকি লোকজনের বাসাবাড়ির সামনেও দিনের পর দিন সেসব বর্জ্য পড়ে থাকে। কোনো কোনো বাড়ির সামনে বর্জ্যের স্তূপ পড়ে আছে এক-দেড় বছর ধরে। উৎকট দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে; মশা-মাছিসহ নানা রকমের পোকামাকড়ের অবাধ বংশবিস্তার চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্গন্ধময় পচা আবর্জনায় ভরা রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে তাঁদের বমি আসে, মাথা ঘোরায়। এমনকি আবর্জনার দুর্গন্ধে বাসাবাড়িতে থাকাও তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

শহরটির বাসিন্দারা অনেকবার লিখিতভাবে ও মৌখিকভাবে তাঁদের এই দুর্ভোগের কথা পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। কারণ, মতলব পৌরসভার মেয়রের বক্তব্য অনুযায়ী, পৌর কর্তৃপক্ষের করার কিছু নেই। কারণ, শহরটির যত্রতত্র জমে ওঠা বর্জ্য সরিয়ে কোথায় নেওয়া হবে, কীভাবে সেগুলোর নিষ্কাশন করা হবে—তা পৌর কর্তৃপক্ষের জানা নেই। কারণ, বর্জ্য জমা করার উপযোগী কোনো জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তবু মেয়র সাহেব প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁর পৌর শহরটির ময়লা-আবর্জনার নিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন; সরকারি বা বেসরকারি কোনো জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে শহরের সব বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে জড়ো করে রাখা হবে।

কিন্তু সেরকম জায়গা কবে খুঁজে পাওয়া যাবে, তা অবশ্য জানা যায়নি। এদিকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে নতুন নতুন বর্জ্য; ইতিমধ্যে জমে ওঠা বর্জ্যের স্তূপের আকার আরও বড় হচ্ছে; আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে শহরটির পরিবেশ। উৎকট দুর্গন্ধের তাৎক্ষণিক দুর্ভোগের পাশাপাশি এই দূষিত পরিবেশ সেখানকার শিশুসহ সব বয়সী মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, তা আরও গুরুতর বিষয়।

শুধু চাঁদপুরের মতলব নয়, সারা দেশের ছোট-বড় অধিকাংশ পৌর শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কম-বেশি একই রকমের। যেসব শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ পৌরবাসীর বাসাবাড়ি, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়ে ফেলার মতো কোনো জায়গা পেয়েছে, সেগুলোর অবস্থা মতলবের চেয়ে ভালো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেগুলোতে প্রকৃতপক্ষে বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা হয় না। মূল শহরের প্রান্তে কোনো ফাঁকা জায়গায়, বিশেষত সড়কের পাশে কোনো জায়গায় শহরের সব বর্জ্য জড়ো করে রাখা হয়; খোলা আকাশের নিচে সেসব বর্জ্য পচে-গলে এক দুর্বিষহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু রাজধানী ও বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়; ছোট মফস্বল শহরগুলোর জন্যও এক বিরাট সমস্যা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের পথ খোঁজা।