রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রশ্নের সুরাহা জরুরি

মাইকেল বেকার
মাইকেল বেকার
মাইকেল বেকার আইনজীবী; যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এখন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজে অ্যাডজাঙ্কড লেকচারার হিসেবে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল পড়ান এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরাল গবেষণার শেষ পর্যায়ে আছেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একজন অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই সুবাদে আইসিজের বিচারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পান। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ১০ ডিসেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে, তাকে সামনে রেখে তিনি এই মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি টেলিফোনে নেওয়া এবং ইংরেজি থেকে অনূদিত। এর দ্বিতীয় পর্ব ছাপা হচ্ছে আজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান


প্রথম আলো: আইসিজের জন্য সালিসকারী (আরবিট্রেটর), প্রসিকিউটর ও বিচারক নির্বাচন কিংবা বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণের প্রচলিত প্রক্রিয়াগুলো কী?

মাইকেল বেকার: আইসিজে একটি সার্বক্ষণিক, স্থায়ী আদালত। সেখানে কোনো প্রসিকিউটর থাকে না, আইসিসিতে যেমন থাকে। আইসিজেতে প্রসিকিউটরের পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই আদালতে কী ধরনের মামলা আসবে, তা সে নিজে নির্ধারণ করে না। আইসিজের গঠনকাঠামো এ রকম: মোট বিচারকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫; তাঁরা নির্বাচিত হন জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ও জাতিসংঘ
সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির ভিত্তিতে। প্রত্যেক বিচারের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ৯ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল থেকে বিচারক নির্বাচন করা হয়, এ বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট বিধিবিধান আছে। এই মুহূর্তে আইসিজেতে এশিয়া মহাদেশের বিচারক আছেন চারজন। তাঁরা লেবানন, ভারত, চীন ও জাপানের নাগরিক।

প্রথম আলো: একজন বিচারক যে দেশের নাগরিক, সেই দেশ যদি কোনো মামলায় বিবদমান দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটির পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে কি সেই বিচারকের তাঁর দেশের অবস্থানের ভিত্তিতে পক্ষপাতিত্ব করার আশঙ্কা থাকে? অর্থাৎ তাঁর দেশের অবস্থান কি তাঁর নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করতে পারে?

মাইকেল বেকার: এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেটা হলো আইসিজেতে যাওয়া কোনো রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যদি ওই আদালতের বেঞ্চে বিচারক হিসেবে না থাকেন, তাহলে সেই রাষ্ট্র একজন বিচারক নিয়োগ করতে পারে, এ ধরনের বিচারককে বলা হয় অ্যাডহক বিচারক বা ‘জাজ অ্যাডহক’। গাম্বিয়া ইতিমধ্যে তাদের অ্যাডহক বিচারক হিসেবে নাভি পিল্লের নাম ঘোষণা করেছে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার একজন আইনজ্ঞ, একসময় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ছিলেন। গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় তিনি বিচারকদের বেঞ্চে থাকবেন। মিয়ানমারেরও একজন অ্যাডহক বিচারক নিয়োগ করার সুযোগ থাকবে। আপনি বিচারকদের পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, সেটা প্রায়ই তোলা হয়। প্রথমত বলি, আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিজের বিচারকেরা স্বাধীন। তাঁরা সেই আদালতে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাঁরা তাঁদের সরকারের কোনো নির্দেশনা গ্রহণ করেন না। তাঁরা স্বাধীনভাবেই কাজ করেন। তবে তাঁদের দৃষ্টিকোণ, আইনের বোঝাপড়া, যেসব বিশেষ মূল্যবোধকে তাঁরা অগ্রাধিকার দেন—এসব কিছুতে তাঁদের নিজ নিজ দেশের আইনি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন বেশ ভালোভাবেই থাকতে পারে; তাঁদের পেশাগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলনও থাকতে পারে। অনেকে আইসিজের বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণের আগে নিজেদের সরকারের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন, কেউ কেউ কূটনৈতিক কর্মকর্তা ছিলেন। কেউ কেউ নিজেদের রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে থাকতে পারেন, কেউ হয়তো জাতিসংঘে কাজ করেছেন। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। এসব অভিজ্ঞতাই তাঁদের আইসিজের কাজে প্রভাব ফেলতে পারে। এটা বিচারকদের কাজের সাধারণ প্রকৃতি, আমি মনে করি না যে এতে কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের আশা করতে হবে যে বিচারকেরা তাঁদের সামনে উপস্থাপিত সব সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচার করবেন খোলা মনে; তাঁদের সামনে উপস্থাপিত সব তথ্য ও যুক্তি গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করবেন। সবকিছু খতিয়ে দেখা ও পর্যালোচনা করার আগে নিজের পূর্বধারণা কিংবা আগেই নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মামলার বিচার শুরু করবেন না। আইসিজেতে আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সেখানে বিচারকেরা তাঁদের দায়িত্ব ও আদালতের স্বাধীনতা বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নেন।

প্রথম আলো: এই বিশেষ মামলাটির শুনানিতে সর্বোচ্চ কতজন বিচারক থাকতে পারেন?

মাইকেল বেকার: সম্ভবত ১৭ জন। ১৫ জন আইসিজের স্থায়ী বিচারক এবং ২ জন অ্যাডহক বিচারক, যাঁদের গাম্বিয়া ও মিয়ানমার নিয়োগ করতে পারবে।

প্রথম আলো: গাম্বিয়ার যে প্রতিনিধিদল আইসিজেতে যাবে, সেখানে বাংলাদেশ কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে?

মাইকেল বেকার: এই মামলার বর্তমান পর্যায়ে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ এই মামলার কোনো পক্ষ নয়। আর বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করতেও পারবে না, কারণ বাংলাদেশ গণহত্যা কনভেনশনের বিরোধ নিষ্পত্তিবিষয়ক ধারাটি গ্রহণ করেনি; যদিও মিয়ানমার তা করেছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশ বা অন্য কোনো তৃতীয় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার এবং আনুষ্ঠানিক ভূমিকা গ্রহণের পথে অবশ্যম্ভাবী বাধা নয়। আমি আগে যেমনটা বলেছি, দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার মামলা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার দুটি ভিন্ন ভিন্ন পন্থা আছে। বাংলাদেশ এই মামলায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে দুটি পন্থাই খতিয়ে দেখতে পারে। গণহত্যা কনভেনশনের ৬২ ধারায় যে ধরনের হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা করা যায় এমন পরিস্থিতিতে, যখন কোনো মামলায় হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রটির আইনি স্বার্থ আছে, যা সেই মামলার রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর ৬৩ ধারায় যে ধরনের হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা করতে পারে ওই গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এমন যেকোনো রাষ্ট্র। আমি মনে করি, ৬৩ ধারার অধীনে বাংলাদেশের এই মামলায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। আরও একটা পন্থা আছে যা অবলম্বন করলে ৬২ ধারার হস্তক্ষেপের অনুমতিও পাওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো: আপনি কি গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় একটা পক্ষ হতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেবেন?

মাইকেল বেকার: আমার মনে হয়, এখানে এই প্রশ্নটা আসছে: এই মামলায় বাংলাদেশের যে একটা স্বার্থ আছে, তা যে গাম্বিয়ার নেওয়া অবস্থানের মাধ্যমে যথেষ্ট মাত্রায় উপস্থাপিত হবে না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো মাথাব্যথা আছে কি না। আমি দেখেছি, লোকজন এ রকম যুক্তি দিচ্ছে যে গাম্বিয়াকে সমর্থন করতে এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানাতে রাষ্ট্রগুলোর উচিত কোনো না–কোনোভাবে এই মামলায় অংশগ্রহণ করা। আমি বুঝতে পারছি যে এ রকম বলা হচ্ছে নৈতিকতার অবস্থান থেকে। রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, এ রকম ক্ষেত্রে এমন নৈতিক আবেদন সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমি জানি না, এটা রাজনৈতিকভাবে কিংবা আইনগত দিক থেকে এই মামলায় জেতার জন্য সহায়ক হবে কি না। আমি মনে করি না যে গাম্বিয়ার পক্ষে অনেক রাষ্ট্র দাঁড়ালেই রাখাইনের ঘটনাবলি কিংবা আইনের মূল্যায়নে আদালত প্রভাবিত হবে। আর এ রকম ক্ষেত্রে সব সময়ই এমন ঝুঁকি থেকে যায় যে অনেক রাষ্ট্র জড়িত হয়ে পড়লে এবং তারা সবাই মিয়ানমারকে দায়ী করতে চাইলেও তাদের যুক্তিগুলো ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে এবং সেগুলো পরস্পরের অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে।

তাই আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত গাম্বিয়া ও তার আইনজীবী দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। আমি জানি না এটা করা হচ্ছে কি না। কিন্তু গাম্বিয়া কী যুক্তি তুলে ধরতে যাচ্ছে, বাংলাদেশের তা বোঝার একটা পন্থা এটা, সেই সঙ্গে এটা গাম্বিয়ার কাছে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো পরিষ্কার করার পন্থাও বটে। বাংলাদেশের যদি মনে হয় যে তার অবস্থান গাম্বিয়ার লিগ্যাল স্ট্র্যাটেজি বা আইনি কৌশলের অন্তর্ভুক্ত হবে না, তাহলে বাংলাদেশের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করার একটা কারণ সৃষ্টি হবে। এটা খুব আগ্রহব্যঞ্জক একটা প্রশ্ন যে বাংলাদেশ এই মামলায় অংশ নিয়ে কী অর্জন করার চেষ্টা করবে। হস্তক্ষেপের যে দুটি বিকল্প পন্থার কথা বললাম, সেগুলোর কোনো একটা অবলম্বন করে বাংলাদেশের হস্তক্ষেপ করা অর্থবহ হবে কি না, তা নির্ণয় করতে সহায়ক হবে ওই প্রশ্নের উত্তর। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রভাব সম্ভবত অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশে এবং আমি মনে করি, এটা পরিষ্কার যে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা গুরুতর স্বার্থ (সিরিয়াস ইন্টারেস্ট) আছে। সেটা শুধু এই প্রশ্নে নয় যে মিয়ানমারের দায়দায়িত্বের সুরাহা কীভাবে হবে, বরং এই প্রশ্নেও যে সেই সুরাহায় রোহিঙ্গা সংকটের প্রতিকার কী হবে। এই মামলার রায় থেকে কি এমন একটা রূপরেখা তৈরি হবে, যার আওতায় বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গারা নিরাপদ পরিবেশে মানবাধিকারের নিশ্চয়তাসহ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে? এখানে বাংলাদেশের একটা স্বার্থ আছে।

প্রথম আলো: আইসিজেতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলে একজন নোবেল বিজয়ীকে (অং সান সু চি) যুক্ত করা হয়েছে সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে কিছু অর্জনের উদ্দেশ্যে। সেখানে সু চির উপস্থিতির বিপরীতে গাম্বিয়ার কি কিছু করা উচিত? সেখানে তাঁর উপস্থিতি কি গাম্বিয়া বা ওআইসি বা রোহিঙ্গাদের স্বার্থের হানি ঘটাতে পারে?

মাইকেল বেকার: মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলে অং সান সু চির উপস্থিতির বিরুদ্ধে কিছু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর আমি বেশি গুরুত্ব দিতে চাই না। গাম্বিয়া খুব শক্তিশালী একটি আইনজীবী দল গঠন করেছে, সেটাতে তাদের নিজেদের বিচারবিষয়ক মন্ত্রীও আছেন, যিনি রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন এবং এই মামলায় তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহ আছে। গাম্বিয়ার আইনজীবী দলে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা আছেন, তাঁদের আইসিজে এবং গণহত্যা কনভেনশন উভয় ক্ষেত্রে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। তাঁদের মধ্যে আছেন সুবিখ্যাত আইনজীবী, লেখক ও পণ্ডিত ফিলিপ স্যান্ডস, যিনি অনেকবার আইসিজের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে আরও আছেন গণহত্যা বিষয়ে কানাডিয়ান বিশেষজ্ঞ পায়াম আখাভান, যিনি বিভিন্ন মামলায় অনেকবার আইসিজেতে উপস্থিত ছিলেন। আরও আছেন পল রেইখলার, যিনি আইসিজের কার্যধারার সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত। আছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ফোলি হোয়াগ ল ফার্ম। অর্থাৎ গাম্বিয়ার আইনজীবী দলে অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের কোনো অভাব নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে গাম্বিয়ার যোগাযোগ করা, যাতে রোহিঙ্গাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো, তাদের মতামতগুলো গাম্বিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়। এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খুব ভালো হয় যদি গাম্বিয়ার আইনজীবী দলে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একজন সদস্য থাকেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সঙ্গে গাম্বিয়ার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই; তাই মিয়ানমারের আচরণের কারণে ভোগান্তির শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গাম্বিয়া ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, এটা তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। গাম্বিয়ার আইনজীবী দল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা ও আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা আমলে নিচ্ছে এবং ন্যায্যভাবে উপস্থাপন করছে, এটা বিশ্বের কাছে এবং বিশেষত আইসিজের সামনে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার জন্য কী করে, সেটা আমি দেখতে আগ্রহী।

প্রথম আলো: অভিযুক্তরা যদি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং দণ্ড পায়, তাহলে তাদের কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?

মাইকেল বেকার: এই মামলায় কোনো দণ্ড হবে না, কারণ আইসিজে ফৌজদারি আদালত বা অপরাধ আদালত (ক্রিমিনাল কোর্ট) নয়। এই মামলায় অভিযুক্ত আছে, কিন্তু কোনো বিবাদী নেই। রাষ্ট্র নিজেই বিবাদী। এখানে কোনো ব্যক্তির অপরাধ নিয়ে আলাপ হচ্ছে না, আলাপ হচ্ছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে। যদি প্রমাণিত হয় যে মিয়ানমার গণহত্যা কনভেনশনের অধীনস্থ কোনো বাধ্যতামূলক বিধান ভঙ্গ করেছে, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের ভাষায় তার অর্থ হবে মিয়ানমার দায়ী। তার ফল কয়েক রকমের হতে পারে; একটা হলো ক্ষতিপূরণ দেওয়া (রেপ্যারেশন)। সেটা হতে পারে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, হতে পারে কেড়ে নেওয়া জায়গাজমি ও সম্পত্তি ফেরত দেওয়া। আদালত প্রতিকারের আদেশ দিতে পারবেন কি না, তা খুব একটা পরিষ্কার নয়। এটা আরেকটা কেন্দ্রীয় ইস্যু: মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া এবং সেখানে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারা। এই ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদালত মিয়ানমারকে সরাসরি আদেশ দিতে পারবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এ রকম সম্ভাবনা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না যে আদালতের কাছে এ রকম আদেশ চাইলে আদালত তা করার একটা রাস্তা খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু আইসিজে এযাবৎ প্রতিকারের বিষয়ে সাধারণত যে ধরনের আদেশ দিয়ে এসেছে, তাতে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরাসরি আদেশ দেওয়া হবে, সেগুলোর বাইরে এক নতুন ধরনের আদেশ। তবে অবশ্যই অনেকে চাইবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে অন্য সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমার তার নাগরিকত্ববিষয়ক আইনসহ অন্যান্য বিধিবিধানে বড় রকমের পরিবর্তন আনুক।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ হলো, তারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, এটা স্বীকার না করা। আমার সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন হলো, হেগের আদালত মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা করার আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন কি না। আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আমার প্রশ্ন নেই।

মাইকেল বেকার: এটা একটা ভালো প্রশ্ন; মামলা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা এটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন। এ মুহূর্তে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে আমি কল্পনা করতে পারি, এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যখন আদালত মিয়ানমারকে বলতে পারেন যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এবং সেখানে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তোমাদের আইনকানুনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের এ রকম পদক্ষেপকে দেখা যেতে পারে গণহত্যা প্রতিরোধের আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে। গণহত্যা প্রতিরোধের আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার সেই মানদণ্ড নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে হবে, তা নির্ধারণ করার বিষয়টি আদালত মিয়ানমারের হাতেই ছেড়ে দিতে পারেন। আদালত খুব জোর দিয়ে মিয়ানমারকে বলতে পারেন যে এই প্রেক্ষাপটে গণহত্যা কনভেনশন মেনে চলার অর্থ হচ্ছে তোমাদের নাগরিকত্বসংক্রান্ত আইনের সংস্কার করা, যাতে গণহত্যার পরিস্থিতি সৃষ্টির সহায়ক পরিকল্পিত ও সংঘটিত বৈষম্য প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু আইন সংস্কারের কাজটি শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের হাতেই থেকে যাবে। প্রশ্নটা জটিল এবং আইসিজের অতীতের চর্চার ভিত্তিতে আমি বলতে পারছি না, মিয়ানমারকে কীভাবে তার আইন সংস্কার করতে হবে, তার দিকনির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার আইসিজের থাকবে কি না। প্রতিকারের বিষয়টা হয়তো গণহত্যা কনভেনশনের আক্ষরিক ভাষার বাইরে চলে যাবে; বর্তমান ক্ষেত্রে আইসিজের সর্বোচ্চ এখতিয়ার গণহত্যা কনভেনশনেই বেঁধে দেওয়া আছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ গণহত্যা কনভেনশন বলে, গণহত্যাকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইনেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এখন আইসিজে যদি দেখতে পায় যে মিয়ানমার সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে আইসিজে মিয়ানমারকে গণহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তার বিচার করার আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কারণ গণহত্যা কনভেনশন পরিষ্কারভাবে সেটাই দাবি করে। এটার সঙ্গে মিয়ানমারের নাগরিকত্বসংক্রান্ত আইন সংস্কার করতে বলার সম্পর্ক আছে বটে, কিন্তু সেই পদক্ষেপ হবে গণহত্যা কনভেনশনের আক্ষরিক বাধ্যবাধকতার বাইরের পদক্ষেপ। এই মামলায় এটা একটা বিরাট ইস্যু হতে পারে।

প্রথম আলো: ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি মনে করেন যে আইসিজের সেই রকমের প্রতিকারের আদেশ দেওয়া উচিত?

মাইকেল বেকার: আইসিজেকে সতর্ক থাকতে হবে, তার আদেশ যেন এমন না হয় যা তার ক্ষমতা ও এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়। আমি মনে করি, বর্তমান পর্যায়ে আদালত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে তার আইন সংস্কার ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করার আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় না এ বিষয়ে আদালত খুব নির্দিষ্ট করে কোনো পরামর্শ দেবেন।

প্রথম আলো: ধরা যাক, আইসিজের মামলায় গাম্বিয়ার জয় হলো, রোহিঙ্গারা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেল এবং পরে আইসিসিতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হলো; কিন্তু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির সুরাহা হলো না; তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত কি এসব কিছুই অর্থহীন থেকে যাবে না?

মাইকেল বেকার: আমি একমত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে অন্য সবার মতো সমান অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত এসব আইনি দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহি বা অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিকার যথেষ্ট বলে অনুভূত হবে না। আর শুধু আইসিজের রায়ের মাধ্যমেই এই ফল অর্জিত হবে, এটা আমার মনে হয় না। তবে আমি মনে করি এই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করা যথার্থ ও যুক্তিসংগত। আজ এখানে বসে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় আদালত ঠিক কীভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির সুরাহা করতে পারেন। আমি সম্ভাবনাটা নাকচ করে দিচ্ছি না, কিন্তু প্রশ্নটা মনোযোগ দাবি করে।

প্রথম আলো: আইসিজের রায়গুলো কি বাস্তবে কার্যকর হয়ে থাকে?

মাইকেল বেকার: যেকোনো আদালতের মতো আইসিজেরও নিজস্ব পুলিশ বাহিনী নেই। যেকোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থায়ও আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারি কাঠামোর ভেতরের অন্যান্য ভূমিকা পালনকারীদের প্রয়োজন হয়। আইসিজের রায় বাস্তবায়নের বিষয়টাও অনেকটা সে রকম। আইসিজে নিজে তার রায় বাস্তবায়ন করতে পারে না; তবে অন্যান্য রাষ্ট্র বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে কাজ করছে—এমন রাষ্ট্রগুলো আইসিজের রায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতে পারে। তার মানে, এটা সম্ভব যে কোনো রাষ্ট্র আইসিজের রায় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে, তাহলে রায়টা বাস্তবায়িত হবে না। এ রকম পরিস্থিতি ভালো নয়। রায় না মানার জন্য মাশুল গুনতে হয়। কোনো রাষ্ট্র আইসিজের কোনো রায় মানতে অস্বীকৃতি জানালে অন্যান্য রাষ্ট্র তাকে একঘরে করার সুযোগ নিতে পারে, তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধসহ আরও নানা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে পারে। আন্তর্জাতিক আদালতে হোক কিংবা কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আদালতে হোক, বিচারিক সিদ্ধান্তগুলো একটা রাজনৈতিক জগতের অংশ; বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। যেসব মানুষ আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি নিয়ে বেশ উৎসাহিত, তাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন, রায়টা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হলে কীভাবে সেটাকে কাজে লাগানো যায়। অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আইসিজের কোনো রায়ের রাজনৈতিক ব্যবহারগুলো কী? এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা শুধু মামলায় জয়ী হওয়াই নয়, লক্ষ্য হলো সেসব নীতি ও কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা যেগুলোর ফলে রোহিঙ্গারা অন্যায়-অবিচার ও নৃশংসতার শিকার হচ্ছে; রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য কিছু প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আইসিজের রায় হবে সেসব প্রয়াসের একটা অংশমাত্র, সংকটের সম্পূর্ণ সমাধান নয়। আপনি যদি একটা সাফল্যজনক রায় পান, তাহলে সেটা কাজে লাগিয়ে ওই সব অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অর্জনের পন্থাগুলো আপনাকে খুঁজে পেতে হবে।

প্রথম আলো: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কি অতীতে আইসিজের দেওয়া কোনো রায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে?

মাইকেল বেকার: না। জাতিসংঘ সনদের আওতায় নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা আছে আইসিজের রায় বাস্তবায়ন করার; কিন্তু তারা কখনো সেই ক্ষমতার আওতায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; তাদের সেটা করার অনুরোধ জানানোর ঘটনাও বেশি ঘটেনি। এমন নয় যে নিরাপত্তা পরিষদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইসিজের রায় বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়, আসলে রায় বাস্তবায়নের অনুরোধ নিয়ে তাদের কাছে যাওয়াই হয় খুব কম। আসলে অধিকাংশ সময়েই মামলার পক্ষগুলো আইসিজের রায় মেনে নেয়। আমাদের প্রবণতা হলো, সেই অল্পসংখ্যক পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করা, যখন কোনো রাষ্ট্র আইসিজের রায় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

প্রথম আলো: আপনি কি এমন একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারেন, যখন আইসিজে রায় ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা অনুসরণ করে পদক্ষেপ নিয়েছে?

মাইকেল বেকার: এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে। একটা ভালো সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো, ২০১২ সালের বেলজিয়াম বনাম সেনেগাল মামলার রায়। এটা আফ্রিকার দেশ চাদের সাবেক স্বৈরশাসক হিসেনে হাবরেকে নিয়ে, যিনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনেগালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বেলজিয়াম তার দেশীয় আইনের ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন স্ট্যাটিউটের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে বেলজিয়ামে প্রত্যর্পণ করিয়ে নির্যাতন ও অন্যান্য অপরাধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। বেলজিয়াম এই যুক্তি তুলে ধরে যে ১৯৮৪ সালের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সেনেগালের বাধ্যবাধকতা আছে হাবরের বিচার করার; কিংবা সে নিজে তা না করলে তাঁকে এমন কোনো রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ করতে হবে যে রাষ্ট্র তাঁর বিচার করতে চায়। আইসিজে বেলজিয়ামের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয় এবং সেনেগালকে আদেশ দেয়, হয় তারা নিজেরা হাবরের বিচার করবে, নয় তাঁকে বেলজিয়ামের কাছে প্রত্যর্পণ করবে। এই রায়ের পর সেনেগাল যথাযথভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে হাবরের বিচার করে। বেলজিয়ামের দাবি অনুযায়ী সেনেগাল তাঁকে তাদের কাছে প্রত্যর্পণ করে বলেই আইসিজেতে মামলাটা শুরু হয়েছিল। তবে সেনেগাল আইসিজের রায় মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী হাবরের বিচার করেছে। আইসিজে নানা ধরনের মামলার শুনানি করে; সীমান্ত বিরোধ, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ নানা ধরনের বিরোধ নিয়ে সেখানে মামলা হয়। তারা যে রায় দেয়, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র সাধারণত তা মেনে নেয়। কখনো কখনো রায়ের কোনো একটা দিক নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে, কিংবা কী পদ্ধতিতে রায় বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে রাষ্ট্রগুলো রায় মেনে নেয়।

আরও পড়ুন: