পাটকলশ্রমিকদের অনশন

১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকেরা কয়েক দফা ধর্মঘট পালনের পর এখন অনশনে আছেন। গত বুধবার শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে শ্রমিকনেতাদের বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এই শীতের রাতে শ্রমিকেরা তাঁবু টানিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। অনশনের কারণে খুলনায় ৪০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেককে স্যালাইন দিতে হয়েছে। তবে শুধু খুলনা নয়, চট্টগ্রামসহ অনেক স্থানেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা অনশন পালন করছেন।

শ্রমিকেরা যে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন, সেগুলোর মধ্যে আছে পাটকলশ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন, নিয়মিত মজুরি পরিশোধ। কাজ করার পর মজুরি পাওনা শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। মজুরি কমিশনের রোয়েদাদ অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণের দাবিও ন্যায়সংগত। অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে সরকারি মজুরি কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে পাটকলশ্রমিকেরা কেন সেই সুবিধা পাবেন না? ক্ষমতাসীনেরা প্রায় রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ করার জন্য বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। কিন্তু তাদের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর এই বেহাল অবস্থা কেন? পাটকল সংস্থা ও মন্ত্রণালয় কী জবাব দেবে? শ্রমিকদের মজুর বকেয়া পড়লেও বিজেএমসির কর্মকর্তাদের বেতন–ভাতাও তো বাকি পড়েনি। তঁারা নতুন বেতনকাঠামো অনুযায়ীই বেতন পাচ্ছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার এগুলো সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) চালানোর যে চিন্তা করছে; সেটি কতটা বাস্তবসম্মত, তা–ও ভেবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশে পিপিপি খুব ফলপ্রসূ হয়নি। পাটকলের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হওয়ারও কোনো কারণ দেখি না। পাটকল নিয়ে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা হলেও শ্রমিকদের দুঃখের দিন শেষ হয়নি।

শ্রমিকনেতারা জানিয়েছেন, দুর্মূল্যের বাজারে নিয়মিত মজুরি না পাওয়ায় তাঁরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করে আসছিলেন। এর আগে তাঁরা কয়েক দফা ধর্মঘট করেছেন। নিরুপায় হয়েই শ্রমিকেরা আমরণ অনশন করছেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও দাবি মানার কোনো লক্ষণ নেই। শ্রমিকেরা  আন্দোলনে নামলেই সরকার দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়, পূরণ করে না। এ কারণে শ্রমিকেরা প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি। এর আগেও আমরা দেখেছি, শ্রমিকেরা চরম কোনো কর্মসূচি না নেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে না। আশা করি, সরকার অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবে। অন্যথায় কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় তাদেরই নিতে হবে।

মজুরি পাওয়া যেকোনো শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। আবার অর্থনীতির সূত্র অনুসারে কারখানা চলতে হবে লাভ করেই। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বেশির ভাগ কারখানা লাভের মুখ দেখেনি। লোকসান দিয়েই চলেছে। এই লোকসানের দায় যতটা না শ্রমিকদের, তার চেয়ে বেশি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার। অবিলম্বে পাটকলশ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিন।