চীন কেন বই পুড়িয়ে দিচ্ছে?

আগুন। প্রতীকী ছবি
আগুন। প্রতীকী ছবি

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গানসু প্রদেশের ঝেনইউয়ান কাউন্টিতে সম্প্রতি একটি গ্রন্থাগারের বই পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। রাষ্ট্র পরিচালিত গ্রন্থাগারটির ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি নিবন্ধের স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, দুজন নারী সরকারি কর্মকর্তা ধর্মীয় বইসহ অন্য অনেক বই আগুনে পুড়িয়ে ফেলছেন। এ ঘটনা চীনের চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাপক ভাইরাল হয়। হাজার হাজার নেতিবাচক মন্তব্য পড়ে। যার মধ্যে অনেকগুলো পরে সেন্সর, অর্থাৎ কাটছাঁট করা হয়।

বই পোড়ানোর এই ঘটনা আসলে গত অক্টোবরে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শুরু করা একটি অভিযানের অংশ ছিল, যেখানে চীনজুড়ে স্কুল লাইব্রেরিগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং এর নেতাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করে বা ‘সমাজের শৃঙ্খলা’কে ক্ষতিগ্রস্ত করে—এমন সব বই সরিয়ে ফেলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। ঝেনইউয়ান অঞ্চলটি নিংজিয়া অঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষে, যেখানে কিনা চীনের হুই মুসলিমদের ২০ শতাংশের বাসস্থান। মনে হচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মীয় বইগুলোই পোড়ানো হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রথম বছরগুলোতে, বিশেষত বিদেশি বই পোড়ানোর ঘটনা ছিল সাধারণ একটি বিষয়। বেশির ভাগ অনলাইন মন্তব্যকারী সরাসরি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা উল্লেখ করেননি। সাংস্কৃতিক বিপ্লব হলো এমন একটি বিষয় ও শব্দ, যা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সরকার ক্রমাগতভাবে সেন্সর করছে। তার বদলে মন্তব্যকারীরা ২১৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করেছেন। ওই সময়টায় ব্যাপক বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং লেখকদের জীবন্ত সমাহিত করা হয়েছিল। একীভূত চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এই সব নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড করেছেন বলে বিবেচনা করা হয়।

বই পোড়ানো-সম্পর্কিত নিবন্ধটি গ্রন্থাগারটির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে এবং কাউন্টি সরকার এ ব্যাপারে একটি তদন্তের এবং জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে বই পোড়ানোর কারণে তারা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়নি, বরং এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়েছে যে কেন তাঁরা এটি প্রকাশ্যে করেছেন। একটি সরকারি বিবৃতিতে কর্মচারীদের দোষারোপ করে বলা হয়েছে, তাঁরা ‘বিধি মোতাবেক সম্মিলিতভাবে বইগুলো ধ্বংস করেননি, বরং গ্রন্থাগারের সামনে একটি ছোট প্লাজায় ৬৫টি অবৈধ বই পুড়িয়েছেন।’

এভাবে বই পোড়ানো চীনা সরকারের মুসলিম, বিদেশি ও ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণুতারই বহিঃপ্রকাশ। নিজের পছন্দের দর্শন প্রচারের জন্য একীভূত চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং অন্যান্য বিশ্বাস, বিশেষত কনফুসিয়ানিজমকে আঘাত করেছিলেন। তাই তিনি কনফুসিয়ান পণ্ডিতদের জীবন্ত সমাহিত করেছিলেন এবং তাঁদের লেখা বই, প্রবন্ধ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। চীনের আধুনিক প্রশাসকেরা সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের চেয়ে যে আলাদা কিছু নন, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

ফরেন পলিসি থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
জেমস পালমার: ফরেন পলিসি পত্রিকার সম্পাদক