বিচার বিভাগীয় সম্মেলন

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রায় বা আদেশ প্রদানে বিলম্ব না করা এবং ৩০ লাখ মামলার জট দ্রুত নিরসনে যথার্থ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ‘সব ধরনের ভীতি ও প্রীতির ঊর্ধ্বে’ উঠে এবং ‘সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততা বজায় রেখে পক্ষপাতহীনভাবে’ বিচারকাজ পরিচালনায় রাষ্ট্রপতির আহ্বানের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন।
তাঁর এই বক্তব্যে জন-আকাঙ্ক্ষাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তবে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার অধিকার একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক সংস্কারের জায়গা থেকে দেখতে হবে। একে বিচ্ছিন্নভাবে মোকাবিলা করা দুঃসাধ্য বলে মনে করি।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ২০১৫-১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট ব্যতিরেকে বিচার বিভাগের জন্য বাজেট প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, আর বিচার বিভাগ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও বিচার বিভাগ রাজস্ব আয়ের কোনো খাত নয়। দ্রুত বিচার, মামলা জট কমানো ও ডিজিটালাইজেশনের স্বার্থে বিচার বিভাগের বাজেট বহুগুণে বাড়ানো সময়ের দাবি। আশার কথা যে আইন ও বিচারমন্ত্রী সরকারের রূপকল্প-২০২১-এর আওতায় বিচারিক অবকাঠামো সম্প্রসারণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের আওতায় ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাতে সায় দেননি। কিন্তু এবার প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচারকের স্বল্পতা দূর ও অবকাঠামো সৃষ্টি করা হলে সার্কিট বেঞ্চ বসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা এই অভিপ্রায়কে স্বাগত জানাই।
ভূমি জরিপ ও অর্পিত সম্পত্তি বিরোধের মতো বিষয় মোকাবিলায় বিশেষ আইনের আওতায় যে গতিতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে তুলনায় তা কার্যকর হয় না। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। এর দ্রুত অবসান হোক। বিচার বিভাগীয় বার্ষিক সম্মেলনের ধারাবাহিকতা বাজায় থাকুক, এটাই প্রত্যাশা।