স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা তৈরি

দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে যে সব সমস্যার সমাধান করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের মোকামতলা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এক কিলোমিটার একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। আমরা এ জন্য তাঁদের অভিনন্দন জানাই।

প্রথম আলোয় রোববার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোকামতলা ও পাশের বাগুন্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী গ্রামীণ মেঠো রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই চলাচলের অনুপযোগী ছিল। জরুরি প্রয়োজনে দুই গ্রামের মানুষকে অন্তত চার কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে চলাচল করতে হতো। এই দুর্ভোগ দূর করতে মোকামতলা গ্রামের বাসিন্দারা আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা রাস্তা নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে আইলহাঁস ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলীর উদ্যোগে মোকামতলা গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই কোদাল, পাওয়ার টিলার, ঝুড়ি নিয়ে নেমে পড়েছেন রাস্তা তৈরিতে। রাস্তাটি তৈরির পর মোকামতলা ও বাগুন্দি গ্রামের লোকজনের চলাচলের দুর্ভোগ দূর তো হবেই, পাশাপাশি তাঁরা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন। রাস্তাটির উভয় পাশে দেড় হাজার বিঘা আবাদি জমি এবং ২০০ বিঘা জলাভূমিতে মাছের চাষ আছে। গ্রামবাসী তখন আরও ভালোভাবে জমিতে ফসল ও জলাভূমিতে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণন করতে পারবেন।  

এলাকাবাসী সড়ক সংস্কারে এগিয়ে এসে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের কাজটি করার কথা, সেই ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কি কোনো দায় নেই? দীর্ঘদিন ধরে একটি গ্রামীণ সড়ক এ রকম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে, মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অথচ তারা নির্বিকার। ইউপি চেয়ারম্যানের উচিত ছিল এ সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় কেন উদ্যোগ নিল না, তার একটা জবাবদিহি দরকার।

তবে শুধু মোকামতলায় নয়, সারা দেশের চিত্র প্রায় একই রকম। দেশের বহু স্থানে বহু সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নেই। ভুক্তভোগীদের আবেদন-নিবেদনেও কোনো কাজ হয় না। মূল সমস্যা হচ্ছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও দায়িত্ব পালন না করলে শাস্তির ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি কার্যকর না থাকা। কর্তব্যে অবহেলার জন্য যদি তারা শাস্তি পেত, তাহলে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এমন বেহাল হতো না। কর্তৃপক্ষ যখন দায়দায়িত্ব নেয় না, জবাবদিহিও করতে হয় না, তখন বাধ্য হয়ে জনগণের কাজে নেমে পড়া ছাড়া আর উপায় কী! মোকামতলা গ্রামের বাসিন্দারা সেই কাজটি করে নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। এটা প্রশংসাযোগ্য, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারে না।