তারাগঞ্জের জুতা যাবে বিদেশে

প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করে নিজ সংসারের ব্যয় নির্বাহে অর্থ উপার্জন করেন, এমন নারীর সংখ্যা এখনো আণুবীক্ষণিক। বিশেষ করে যে নারীরা স্বল্প শিক্ষিত অথবা একেবারেই শিক্ষাগত যোগ্যতাহীন, তাঁদের সামনে অতি ক্ষুদ্র পরিসরে শাকসবজি উৎপাদন কিংবা হাঁস-মুরগি পালন ছাড়া অন্য কোনো অর্থকরী সুযোগ নেই। কারণ, কর্মসংস্থানের মূল উৎস কলকারখানা প্রায় সবই মহানগরকেন্দ্রিক। চামড়াজাত পণ্য, পোশাক কিংবা অন্য সব ধরনের পণ্যের কারখানা সাধারণত ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় মহানগরের আশপাশে নির্মিত হয়। ফলে গ্রামের কোনো শিক্ষাবঞ্চিত নারী যদি উপার্জন করতে চান, তাহলে তাঁকে বাধ্য হয়েই গ্রাম থেকে মহানগরে চলে আসতে হয়। শহরকেন্দ্রিক এই শিল্পায়নের প্রবণতা বৈষম্যের একটি বড় কারণ। এই ব্যবস্থা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা রাখার সুযোগ কমিয়ে রেখেছে।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রত্যন্ত এলাকায় শিল্পকারখানা নিয়ে যেতে হবে। গ্রামীণ নারীরা যদি সেসব কারখানায় কাজ করার সুযোগ পান, তাহলে সরাসরি তঁারা উপার্জন করতে পারবেন এবং জাতীয় পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নে তা বড় ভূমিকা রাখবে।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের পাশে ঘনিরামপুর গ্রামে সাড়ে আট একর জমির ওপরে গড়ে ওঠা ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের একটি জুতার কারখানা গ্রামীণ জনপদের নারীদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ওই কারাখানাটি গড়ে তুলেছেন নীলফামারী সদর উপজেলার বাবুপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী মোহাম্মদ সেলিম ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। বিদেশে গিয়ে যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্যে সাফল্য পেয়ে দেশে বিনিয়োগ করায় আগ্রহী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তাঁরা আছেন।

পুরোদমে উৎপাদনে গেলে দুই হাজারে বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে এ কারখানায়। তাঁদের ৯০ শতাংশই হবেন নারী। কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক জুতা উৎপাদনের কাজ শুরু করেছেন দেড় শতাধিক শ্রমিক। আরও দুই শতাধিক শ্রমিককে দক্ষ করতে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।

এখান থেকে চামড়াজাত সিনথেটিক জুতা এবং অন্যান্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হবে। এখানে সিনথেটিক জুতা, চামড়াজাত জুতা, বেল্ট ও ওয়ালেট তৈরি হবে। কারখানাটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা হবে ২২ হাজার জোড়া জুতা। এসব জুতা রপ্তানি হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে। আশা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে।

গ্রামীণ জনপদ ঘনিষ্ঠ এলাকায় এ ধরনের উদ্যোগকে শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিবেচনা করা দুরস্ত নয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে উদ্যোগগুলো জাতীয় জীবনে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ ধরনের উদ্যোগকে সরকারের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা দরকার, যাতে অন্য প্রবাসীরাও নিজ দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন।