জানুয়ারিতে ঢাকার সিটি নির্বাচন

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেই হিসাবে নির্বাচন কমিশন নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর জানিয়েছেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও রাজনৈতিক মহলে নির্বাচন নিয়ে নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী কারা হবেন, তা নিয়ে ঢের জল্পনা চলছে। কেউ কেউ মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার আগাম ঘোষণাও দিয়েছেন। শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন এমন সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জেলে কিংবা পলাতক। দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানে যখন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা ধরা পড়েন, তখন তাঁদের অপকর্মের বিষয়টি আর গোপন থাকে না। নির্বাচিত প্রতিনিধির কাজ জনগণের সেবা করা এবং সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাঁরা ভোট নিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কী করেছেন, তার কিছু আলামত তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকলে আরও অনেক জনপ্রতিনিধির অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এত দিন জেনে এসেছি, পদ মানুষকে দায়িত্বশীল করে, কিন্তু স্থানীয় সরকার সংস্থার জনপ্রতিনিধিদের একাংশের কাজকর্ম দেখে মনে হয় পদ তাঁদের আরও বেশি বেপরোয়া করেছে, কাউকে দুর্নীতিবাজ, মাস্তান বানিয়েছে।

২০১৫ সালে যখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়, তখন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে গালভরা প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। অনেকে ঢাকাকে তিলোত্তমা শহর হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা তাঁরা পূরণ করেছেন, কী সেবা তাঁরা দিয়েছেন, নগরবাসী নিশ্চয়ই তার হিসাব চাইবে। উল্লেখ্য, নির্বাচনের পর উত্তরের মেয়র আনিসুল হক জনস্বার্থে কিছু কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল। তাঁর অকালমৃত্যুর পর উত্তরের বাসিন্দারা একজন নতুন মেয়র পেলেও কাজে সেই গতি ফিরে আসেনি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজকর্ম সব সময়ই গতানুগতিক ধারায় চলেছে। গত ডেঙ্গুর মৌসুমে অবকাঠামোগত দুর্বলতার পাশাপাশি দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনই অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়নি। এক বা একাধিক কোম্পানি গঠন করে পুরো শহরে বাস সার্ভিস পরিচালনার উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তেমন কিছু এখনো চালু করা যায়নি।

বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের মেয়র কিংবা আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির মেয়রদের কাছ থেকে একটি অভিন্ন অভিযোগ শোনা যেত,
সরকারের অসহযোগিতার জন্য তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। কিন্তু যাঁরা দুই সিটিতে গত পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা সরকারি দলেরই লোক। ফলে সরকারের অসহযোগিতার অভিযোগ ধোপে টিকবে না। যদি এ সময় নগরবাসী সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে, তার দায় মেয়রদ্বয় এড়াতে পারেন না। 

এই মুহূর্তে নগরবাসীর আশা থাকবে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ হোক, যাতে মানুষ তাঁর পছন্দসই প্রতিনিধি বাছাই করতে পারেন। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি অনেকগুলো স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন করেছে, কিন্তু তারা ভোটাধিকার রক্ষার বিষয়ে অমার্জনীয় উদাসীনতা দেখিয়েছে। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যে নেমে এসেছে। এর পুনরাবৃত্তি কেউ দেখতে চায় না। নতুন বছরে নতুন যাত্রা হোক।