কারেন্ট জালে পাখি নিধন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের ধানখেতে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কারেন্ট জালের পরিবর্তে অন্য উপায়ের কথা ভাবতে হবে। ধান রক্ষা করতে গিয়ে এভাবে পাখি নিধন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, এবার গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে শত শত বিঘা জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। ধান পাকতে শুরু করলে চড়ুই, বাবুইসহ বিভিন্ন পাখির উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। পাখিরা এসে আধা পাকা ধান খেয়ে ফেলছে। পাখির আক্রমণ থেকে ধান রক্ষায় তাই কৃষক খেতের ওপর কারেন্ট জাল বিছিয়েছেন। আর কারেন্ট জালে আটকে মারা পড়ছে পাখিরা। ইতিমধ্যেই ২৫০টির বেশি পাখি মারা গেছে। 

কৃষক তাঁদের উৎপাদিত ধান রক্ষার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা কখনোই পাখি হত্যা করে নয়। পাখিরা আমাদের পরিবেশের এক বড় সম্পদ। বনের খাদ্যশৃঙ্খলে স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখা, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বীজের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পাখির। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, খাদ্যসংকট, জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে এমনিতেই অনেক পাখি বিলুপ্তির পথে। তার ওপর যদি এভাবে কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা যায়, তা হলে এটা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কৃষক পাখি তাড়ানোর জন্য কম ক্ষতিকর পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে পারেন। যেমন কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা, খেতে খুঁটি পুঁতে তাতে ফিতে টানিয়ে দেওয়া, বাতাসে ফিতার পতপত শব্দে পাখি আর আসবে না। অথবা টিনে অনবরত শব্দের ব্যবস্থা করা, শব্দে ভীত হয়ে পাখি খেতে আর বসবে না।

কৃষকের জানা উচিত, পাখি শুধু ধানখেতে আসে না, তারা ধানের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে। পাখি দিয়ে খেত থেকে পোকামাকড় তাড়ানোর একটি পদ্ধতিও রয়েছে। একে বলা হয় পার্চিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ধানখেতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিতে হয়। পাখি বাঁশের এই আগা, কঞ্চি, গাছের ডালে বসে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। এ বাস্তবতায় কৃষকের কোনোভাবেই উচিত নয় ফসলের মাঠে কারেন্ট জাল পেতে রাখা।

আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, কৃষক পাখি ঠেকাতে এভাবে অবাধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন, অথচ তা দেখার কেউ নেই। ১৭ বছর আগে ২০০২ সালে সরকার কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। এখনো এর উৎপাদন এবং অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। জেলেরা তো ব্যবহার করছেনই, এখন কৃষকও ব্যবহার করছেন। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর নজরদারি আশা করছি।