একটি ইউনিয়নে ৩০ ইটভাটা

একটি নয়, দুটি নয়—৩০টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে! তা–ও আবার সব কটিই অবৈধ। এসব ইটভাটার অস্তিত্ব বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে। শুধু একটি ইউনিয়নে ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার খবরটি আমাদের বিস্মিত করার পাশাপাশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন–২০১৩ অনুযায়ী, কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে, ঢালে বা তৎসংলগ্ন আধা কিলোমিটারের মধ্যে সমতলে ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ফাইতং ইউনিয়নের ইটভাটার মালিকেরা যে এ আইনের কোনো তোয়াক্কা করেননি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৩০টি ইটভাটার বেশির ভাগই পাহাড়ের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কোনোটি বনাঞ্চলের পাশে, আবার কোনো কোনোটি লোকালয়ের পাশে। এসব ভাটায় ইট তৈরিতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ।

পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যদি ৩০টি ইটভাটা থাকে, তাহলে সেই এলাকার পরিবেশ কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এলাকাটা সব সময় ধুলায় ধূসরিত থাকছে। পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র, কোনোটি নেই এসব ইটভাটার। অথচ এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা বা উপজেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর, কারও কোনো উদ্যোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না? ইটভাটাগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের স্বার্থের সম্পর্ক বা ভাগ-বাঁটোয়ারার ব্যাপার না থাকলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

খবর অনুযায়ী, কিছুদিন আগে এসব ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়। তারপরও বন্ধ হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে, জরিমানা করে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন কঠোরতর আইন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ।

তবে শুধু ফাইতং ইউনিয়নেই নয়, দেশের আরও অনেক স্থানে আইন লঙ্ঘন করে ইটভাটা গড়ে উঠেছে। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইটের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ জন্য ইটভাটারও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এসব ইটভাটায় যে পদ্ধতিতে ইট তৈরি হয়, তাতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা, যেমন হাইব্রিড হফম্যান, ভার্টিক্যাল স্যাফট, জিগজ্যাগ ইটভাটা স্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু এসব পদ্ধতির ইটভাটা তৈরি করা অনেক ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ইটভাটার মালিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের ইট যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন পরিবেশ বাঁচানো। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুষ্ঠু ইট উৎপাদনব্যবস্থা গড়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।