ন্যানো সার উদ্ভাবন

কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার ও মাছের খামারে ট্যানারির শিল্পবর্জ্য ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার যেভাবে বল্গাহীনভাবে চলছে, অদূর ভবিষ্যতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা ভয়াবহ হবে, তা ভাবলে যে কেউ শিউরে উঠবে। জমিতে ও মাছের খামারে রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক খাবার না দিলে উচ্চ ফলনের আশা নেই বলে এই সার দিতেই হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো যতটুকু রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ ফসল শুষে নেয়, বাকি ৩০ শতাংশ হয় মাটিতে মিশে যায় অথবা পানিতে ভেসে নদীনালায় মেশে।

রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। বাস্তব অবস্থা হলো, এই সার ব্যবহার না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন হয় না। আর ব্যবহার করলে মাটি ও পানি বিষাক্ত হয়। অর্থাৎ এই সার ব্যবহার করলেও বিপদ, না করলেও বিপদ।

একইভাবে খামারে ট্যানারির শিল্পবর্জ্য ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহারে মাছ দ্রুত বড় হয়। কিন্তু আখেরে তা ভালো হয় না। শিল্পবর্জ্য ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা মাছের শারীরিক বৃদ্ধি ঘটালেও তাতে ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর উপাদান থেকে যায়। এসব মাছ খেলে ক্রোমিয়াম মানবদেহে ঢুকে পড়ে।

আনন্দের কথা হলো সার দিলেও জ্বালা, না দিলেও জ্বালা—এ উভয়সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশা জাগিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক। তাঁরা মাটি এবং মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ন্যানো (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র) প্রযুক্তির সার ও মাছের খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। গতানুগতিক সার ও মাছের খাবারের বিকল্প হিসেবে ন্যানো সার ও ন্যানো খাবার ব্যবহার করা যাবে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাভেদ হোসেন খানের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা করে এ সফলতা পেয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা ঢ্যাঁড়স, মরিচ, লেটুস, ক্যাপসিকাম ও বেগুন চাষে ন্যানো সার প্রয়োগ করেছেন। এ ছাড়া তাঁরা তেলাপিয়া ও কার্পজাতীয় কয়েক প্রকার মাছের ক্ষেত্রে মাছের ন্যানো খাদ্য ব্যবহার করেছেন। উভয় ক্ষেত্রে সফলতাও পাওয়া গেছে। এই সাফল্য দেশের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা যেতে পারে।

ন্যানো সারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সাধারণ রাসায়নিক সারের ১০০ ভাগের ১ ভাগ পরিমাণ ন্যানো সার দিলেই ফসল খাদ্য উপাদান পেয়ে যাবে।
অতিরিক্ত রাসায়নিক মাটিতে পড়ে থাকবে না। এই সার প্রয়োগ করা উদ্ভিদের মধ্যে লৌহ, তামা, জিঙ্কসহ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে।

এক বছরের মধ্যে মাঠপর্যায়ে চাষির হাতে এই সার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। সেটি সম্ভব হলে দেশের কৃষি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তাই এর প্রসারে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার।