চোখের পানি, কাদাপানি

খুলনা নগরের খালিশপুরের কিছু অংশের সড়কের অবস্থা কলিম শরাফীর গাওয়া গানটির মতো, ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে, সেই দুঃখে চোখের পানি’। সড়কের তলায় পাতা হবে গ্যাসের পাইপলাইন। এ জন্য সড়ক খুঁড়ে উদলা করে রাখা হয়েছে, পাইপলাইন পাতার পর খোঁড়া অংশের আর মেরামত হয়নি। যথারীতি খোঁড়া মাটি যেনতেন প্রকারে ঢেলে গর্ত বোজা হয়েছে। তার ওপর দিয়ে মানুষকে করতে হচ্ছে চলাচল।

প্রথম আলোর শনিবারের প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, অক্টোবরে খোঁড়া সড়ক এই ডিসেম্বরের শেষাশেষিও মেরামত করা হয়নি। খালিশপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। একদিকে শিল্প এলাকা, অন্যদিকে আবাসিক বসবাস হওয়ায় ভোগান্তি দুই তরফেরই। শেষ বর্ষায় মানুষ ভুগেছে; এখন শীতের শিশির তো বটেই অকালবৃষ্টিতে ভেসে সড়ক পরিণত হয়েছে খানাখন্দে। শুকনা দিনে তা অবাধে ধুলা ছড়ায়, ভেজা দিনে ভোগায় কাদাপানিতে। তিন মাস যাবৎ এই অবস্থা বিরাজ করলেও প্রতিকারের সুযোগ ঘটেনি কোনো কর্তৃপক্ষের।

সড়কের মাঝবরাবর খুঁড়ে পাইপলাইনে গ্যাস নেওয়ার কাজের কর্তৃপক্ষ নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিসিএল), কাজটি তারা দিয়েছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে। এখন এনডব্লিউপিসিএলের বক্তব্য হলো, সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানোর ক্ষতিপূরণ বাবদ তারা খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি) ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে। তা যদি হয়, তাহলে দায়িত্বের ভার এখন কেসিসির কাছে। সড়কে অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তির জন্য তাদেরই দায়ী হওয়ার কথা। কিন্তু দেখতে হবে এনডব্লিউপিসিএল যথাসময়ে এই অর্থ পরিশোধ করেছে কি না এবং পরিশোধ করা সত্ত্বেও কেসিসি সড়ক মেরামতে গাফিলতি দেখাচ্ছে কি না।

চিত্রটি নতুনও নয়, খুলনার বিশেষ বাস্তবতাও নয়। উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি দেশজুড়েই চলছে। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অতি মারাত্মক। ধুলা, কাদা, ভাঙার দৃশ্য সবখানে। এতে মানুষজনের কষ্ট তো দেখাই যাচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনাও কম নয়। বেহাল সড়ক, চলাচলের অনুপযুক্ত এলাকা মানে হলো, সেসব এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সামাজিক জীবন আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না। অজস্র মানুষ অসুবিধা নিয়ে এসবের মধ্যে চলাচল করে, দিনযাপন করে। বায়ুদূষণে অনেকের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধ এবং প্রসূতিদের দুর্দশা বলার যোগ্য থাকে না।

সবকিছু কর্তৃপক্ষের জানা। তারপরও সময়ের কাজ সময়ে হয় না; যা হয় তাতেও বিবিধ প্রকারের গোঁজামিল ও জোড়াতালি। যদি দুর্নীতি না-ও হয়, তবু দেখা যায় অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘসূত্রতা। এ সবকিছুর গোড়ার কারণ আর কিছু নয়, মানুষের প্রতি চরম উপেক্ষা। মানুষের কষ্টে কিছু যায় না-আসার এই সংস্কৃতি যদি না বদলায়, তাহলে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে?