অর্জন ও আশাবাদের সঙ্গে আছে দুর্বলতা ও উদ্বেগ

>

বিদায় নিচ্ছে ২০১৯। এই বিদায়ী বছরে কেমন গেল দেশের অর্থনীতি? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে ভালো করেছে। আবার অনেক দুর্বলতাও আছে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়েনি। বেড়েছে বৈষম্য। দারিদ্র্য দূরীকরণের হারও কমেছে। ২০১৯ সালের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান

কেমন গেল ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি? সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

এ কথা সত্য যে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অর্জন কম নয়। এই সময়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ গুণ। দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭০ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। পোশাকশিল্পের মতো একটি খাতে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সামাজিক খাতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের দেশের অবস্থান থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের অবস্থানে উত্তরণ করেছে।

তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরে অর্থনীতির বেশ কিছু দুর্বলতা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি, সামনের দিনগুলোতে দুটি বড় বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যোগ দেবে। এতে রপ্তানি খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বেশ কিছু বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। অর্থনীতি কতটুকু প্রস্তুত আছে এই চাপ সামলে নেওয়ার, তা বিশ্লেষণ করা দরকার। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ কিছু নয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে গতানুগতিক প্রক্রিয়া এবং উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী ১১ বছরে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনা করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয় দুটি বিবেচনায় রাখা খুবই প্রয়োজন।

প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান

২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিগত এক দশকে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার পৌনে ৭ শতাংশের কাছাকাছি। গত পাঁচ বছরে প্রবৃদ্ধির হার একটানা ঊর্ধ্বমুখী এবং গড়ে ৭ শতাংশের ওপরে। প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী হার অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী হারের সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু চলকের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী হার, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের স্থবিরতা, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী হার এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্থবিরতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ২০১৯ সালের শেষ কয়েক মাসে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির সাম্প্রতিক সময়ে সর্বনিম্ন হার উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

রপ্তানি খাতে সমস্যার কারণ, একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। পোশাকশিল্পের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা, রপ্তানি খাতে বহুমুখীকরণে ব্যর্থতা, অতিদুর্বল প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা, উচ্চ ব্যবসা খরচ ও সময়মতো টাকার প্রতিযোগিতা-সক্ষম মূল্যমান বজায় রাখার ব্যর্থতা সমস্যাকে সমাধানের বদলে আরও জটিল করে তুলছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ, দেশে দেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান সংরক্ষণবাদ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আভাস বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য সুখবর নয়। এ কথা উল্লেখ্য যে যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য নতুন কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছে চীন থেকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ স্থানান্তকরণের মাধ্যমে। কিন্তু অতি দুর্বল প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা ও উচ্চ ব্যবসা খরচের কারণে বাংলাদেশ এসব সুযোগের সুবিধা নিতে ব্যর্থ। এর বিপরীতে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল।

আমরা যদি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৯ সালের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকের দিকে তাকাই, বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১টি দেশের মধ্যে ১০৫তম এবং ২০১৮ সালের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ পিছিয়েছে। এই প্রতিযোগিতা সূচক ১২টি বড় ক্ষেত্র চিহ্নিত করে, যা সামগ্রিক প্রতিযোগিতা সূচক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্যবাজারের দক্ষতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, আর্থিক খাত উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বাজারের আকার, ব্যবসায়িক পরিশীলিতা এবং উদ্ভাবন। এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ ছাড়া সব ক্ষেত্রেই চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের তুলনায়—যারা বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী—বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি শ্রমবাজার এবং কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ
রয়েছে। যেমন বড় আকারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, শোভন কাজ নিশ্চিত করা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, যুব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং শ্রমের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি।

এ কথা উল্লেখ্য যে অর্থনীতির ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থানের উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে অর্জন অনেক কম। নতুন কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির অনেক ধীরগতি, নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ৩৫-৩৬ শতাংশের মধ্যে গত এক দশকে আটকে থাকা, কর্মসংস্থানের ৮৫ ভাগের বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতে হওয়া, উচ্চ হারের যুব বেকারত্ব ও যুবকদের ৩০ ভাগের মতো কোনো ধরনের শিক্ষা, কাজ ও প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা কোনোক্রমেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পক্ষে সহায়ক নয়।

 ব্যক্তি খাতে স্থবির বিনিয়োগ, এমনকি সামগ্রিক বিনিয়োগ বেশি না বাড়লেও উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান এবং উচ্চহারে শ্রমের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। অথচ দেশে ওপরে উল্লিখিত অতি দুর্বল প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা এই ধরনের শ্রমের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির চিত্রের সঙ্গে মেলানো কঠিন।

দারিদ্র্য বিমোচন, অসাম্য

দারিদ্র্য হ্রাসে গত কয়েক দশকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সত্ত্বেও উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র হলো বিগত দশকগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক দশকে বার্ষিক দারিদ্র্য হ্রাসের হার যথেষ্ট কমে এসেছে। অর্থাৎ, অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দারিদ্র্যের হার বাংলাদেশে এখনো অনেক বেশি। ২০১৯ সালের হিসাবে, জাতীয় দারিদ্র্য আয়সীমা অনুযায়ী যদি ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকে, তাহলে দেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি দরিদ্র মানুষ আছে। এই হিসাব পাল্টে যায় ভিন্ন দারিদ্র্য আয়সীমা বিবেচনা করলে। বিশ্বব্যাংকের ৩ দশমিক ২ ডলার দারিদ্র্য আয়সীমা অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।

এক দশক ধরে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে বৈষম্য সূচক বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গৃহস্থালি আয় এবং ব্যয় জরিপ অনুসারে আয়ের গিনি সহগ, যা আয়বৈষম্যের একটি জনপ্রিয় পরিমাপ, ২০১০ সালে শূন্য দশমিক ৪৫৮ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে শূন্য দশমিক ৪৮২ হয়েছে। আসল বৈষম্যের চিত্রটি বিবিএসের জরিপের প্রাক্কলনের চেয়ে খারাপ বলে মনে করা হয়। কারণ, এই গৃহ জরিপগুলো বেশির ভাগই অতিধনী পরিবারের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। তবে তথ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সূচকটি এবং দারিদ্র্যের উপরোক্ত চিত্র এটাই নির্দেশ করে যে সমাজের ধনী অংশটি এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বারা আরও বেশি উপকৃত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তমূলক প্রক্রিয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে।

‘পলিসি প্যারালাইসিস সিনড্রোম’

বাংলাদেশ এখন এমন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে, যাকে ‘পলিসি প্যারালাইসিস সিনড্রোম’ বা ‘নীতির জড়তা’ বলা যেতে পারে। ‘নীতির জড়তা’ হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় নীতি, আইন ও সংস্কার গৃহীত হয় না বা গৃহীত হলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রতিশ্রুতি না থাকার কারণে বাস্তবায়িত হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, সরকার সংস্কারের জন্য নীতিমালা তৈরি করলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে এবং সরকার সেগুলো কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই ধরনের ‘পলিসি প্যারালাইসিস’-এর কারণে সময়মতো অর্থনৈতিক সংস্কার করতে সরকারের অক্ষমতার ফলে চলমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ এবং বৃহত্তর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

পলিসি প্যারালাইসিসের প্রথম ক্ষেত্রটি রাজস্ব খাতে, যেখানে ২০১১ সাল থেকে জিডিপির অনুপাতে কর আদায় ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নতম কর-জিডিপি অনুপাতের দেশগুলোর তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের কম। অন্যদিকে ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে কর-জিডিপি অনুপাত যথাক্রমে ১১ শতাংশ, ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশে রাজস্ব খাতে যথাযথ সংস্কার প্রক্রিয়ার অভাব এবং নীতিপ্রয়োগ ও বাস্তবায়নে অকার্যকারিতা উভয়ই পলিসি প্যারালাইসিসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন কর নীতির সংস্কার এবং বাস্তবায়ন, করভিত্তি উন্নত করা, কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করা এবং কর ফাঁকি রোধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবশালীদের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি।

পলিসি প্যারালাইসিসের দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি আর্থিক খাতে। খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০১১ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ১২ শতাংশের ওপরে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর খেলাপি ঋণের অনুপাত ৩ শতাংশের কম। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সমর্থিত বিধান প্রবর্তন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অনেক ছাড় সংকটকে আরও গভীর করেছে। যদিও ব্যাংকিং খাতের বিস্তৃত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার নিয়ন্ত্রণমূলক দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতা প্রদান করা দরকার, তবু সরকারের পক্ষ থেকে এদিকে খুব কম প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। সুতরাং, সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবশালীদের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতির অভাব ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পেছনে বড় অন্তরায়।

পলিসি প্যারালাইসিসের তৃতীয় ক্ষেত্র হলো জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারের অত্যন্ত কম খরচ, যা দুই দশক ধরে যথাক্রমে ২ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে। জিডিপির অনুপাতে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক খাতে সরকারি সর্বনিম্ন ব্যয়ের দেশগুলোর তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই দুই সামাজিক খাতে এত কম খরচ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবশালীদের দৃষ্টিভঙ্গির গুণগত পরিবর্তন।

ড. সেলিম রায়হান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক
[email protected]