কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকও। ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য যানবাহনের সুবিধা নেই। সেটি সেবাপ্রার্থীরা হয়তো আশাও করেন না। কিন্তু যেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীকে আনা-নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আছে, সেখানে রোগীরা স্বাভাবিকভাবে যানবাহনের সেবা আশা করতেই পারেন।

গতকাল প্রথম আলোর সিলেট সংস্করণে সপ্তম পাতায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যে খবরটি ছাপা হয়েছে, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানটির বেহাল চিত্রই উঠে এসেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দুই মাস ধরে বসে আছে। কারণ, চালক নেই। গত ১ নভেম্বর আগের চালক অবসরে গেছেন। নতুন কোনো চালক নিয়োগ না হওয়ায় রোগীরা যানবাহনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রথম আলোর প্রতিনিধি গিয়ে দেখেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটির পাশে কয়েকটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সও দাঁড়িয়ে আছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা কোনো রোগীর চিকিৎসা সম্ভব না হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে জেলা হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আর রোগীর অবস্থা নাজুক হলে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সেই পাঠাতে হয়। কিন্তু দুই মাস ধরে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সটি চালকের অভাবে অলস বসে থাকা দুর্ভাগ্যজনক। এ অবস্থায় রোগী বেশি ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে জেলা সদর হাসপাতাল বা অন্য কোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।

কুলাউড়া থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা। সেই হিসাবে মৌলভীবাজারের ভাড়া হওয়ার কথা ৩৭০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে থাকে দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি। অনেক গরিব রোগীর পক্ষেই এই বাড়তি ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিভাগ যদি রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্সই কিনে দিয়ে থাকে, তাহলে যথাসময়ে চালক নিয়োগ দেবে না কেন? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেছেন, আগের চালক অবসরে যাওয়ার এক মাস আগেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্ভবত ঊর্ধ্বমুখী কাজে এতটাই বিভোর যে নিচের দিকে নজর দেওয়ার সময় পায় না!

কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু চালকের পদই শূন্য নয়, শূন্য আছে প্রসূতি চিকিৎসক ও অবেদনবিদের পদও। ফলে এখানে অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হয় না। এসব ‘নেই’এর মধ্যে কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলতে পারে না। অবিলম্বে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হোক।