নালিতাবাড়ীতে কিশোর মেলা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গত সোমবার ‘কৈশোর সুরক্ষায় হব সচেতন’ স্লোগানে দিনব্যাপী যে কিশোর-কিশোরী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। মঙ্গলবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, এডিপি প্রজেক্টস ও ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে উপজেলার ৫২টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের অংশগ্রহণে এ মেলা হয়। এতে ছিল আটটি স্টল, যা কিনা কিশোর-কিশোরীরা নিজেরাই তৈরি করে। কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যার মধ্যে ছিল সচেতনতা সৃষ্টিমূলক নাটিকা। এ ছাড়া কৈশোরকাল সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা দেওয়া হয়। এ ধরনের একটি মেলা আয়োজন করার জন্য আমরা এডিপি প্রজেক্টস ও ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনে করি, কিশোর-কিশোরীদের জীবনমানের উন্নয়নে এ ধরনের মেলার আয়োজন বেশি বেশি করে করা উচিত।

কৈশোরকাল মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের অভাবে তাদের জীবন অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত হয়। কৈশোরকাল নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য তাদের প্রয়োজন জীবনদক্ষতা বৃদ্ধির ওপর প্রশিক্ষণ। দেশের বহু কিশোর-কিশোরী এখন কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে এসব প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। শুধু নালিতাবাড়ী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপিত হয়েছে। এসব ক্লাবে কিশোর-কিশোরীদের বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং, যৌতুক, লিঙ্গবৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি সমাজের নেতিবাচক বিষয়গুলো প্রতিরোধে দক্ষতা বৃদ্ধির শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা মনে করি, এ ধরনের ক্লাব স্থাপন কিশোর-কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি। এর অর্ধেক কিশোরী। অল্প বয়সে বিয়ে, গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের কারণে কিশোরীদের একটা অংশ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। কিন্তু কিশোরীদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সরকার কিশোর-কিশোরীদের জন্য সারা দেশে ৪ হাজার ৮৮৩টি ক্লাব গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৮ সালে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই পুরো দেশকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেখতে হলে কিশোর-কিশোরীদের দিকে নজর দিতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের কাছে স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য নেই। এ ধরনের মেলায় যোগ দিয়ে তারা তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পরে; যা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও সচেতন করবে।