কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেল

সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প হবে কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এ ধরনের পথ দেশের ইতিহাসে প্রথম। কিন্তু এই সুড়ঙ্গপথটি থেকে সবচেয়ে বেশি সুফল পেতে হলে একটি নতুন সড়ক তৈরি করতে হবে। এটা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পরিষ্কার, কোনো দ্বিমত আছে বলে জানা যায় না। কিন্তু সুড়ঙ্গপথের কাজ অর্ধেক শেষ হলেও সেই রাস্তাটির ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অত্যন্ত জনগুরুত্বসম্পন্ন এই সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে তা হবে দুঃখজনক।

পানির তলার সুড়ঙ্গপথটি কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পরই এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই বঙ্গবন্ধু টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু এর সবটারই সার্থকতা চূড়ান্ত অর্থে প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণের ওপর নির্ভর করবে। 

উন্নয়ন দর্শনের মূল কথা হলো, জনগণের সর্বোচ্চ মঙ্গল ও সুবিধা নিশ্চিত করা। সেখানে ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা নদীর নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করছি এবং সবাই জানছি ও মানছি যে একটি মহাসড়ক এই সুড়ঙ্গপথের সক্ষমতাকে পূর্ণতা দেবে। মানুষের সন্তুষ্টির স্তরকে বিরাট উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। সেখানে আনোয়ারা থেকে বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পর্যন্ত কেন প্রস্তাবিত সড়কটি বাড়তি গুরুত্ব পাবে না? এ ক্ষেত্রে অর্থ বা কারিগরি জ্ঞানের কোনো ঘাটতির কথা শোনা যাচ্ছে না। বিষয়টি যদি শুধু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লাল ফিতার কবলে পড়ে থাকে, তবে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেছেন সেই সড়ক নির্মাণের কোনো উদ্যোগ–আয়োজন এখনো নেওয়া হয়নি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছেন, তা খুব উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কারণ, তিনি বলছেন, এই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে। এটা শেষ হলে এই প্রকল্প অনুমোদনের ‘কাজে হাত’ দেওয়া হবে। যদিও তিনি বলছেন যে ‘তাতে বেশি সময়’ লাগার কথা নয়। কিন্তু এ ধরনের ক্ষেত্রে আমাদের যে সাধারণ অভিজ্ঞতা, তাতে খুব ভরসা রাখার উপায় নেই।

চট্টগ্রাম চেম্বারের অভিমতের সঙ্গে আমরা একমত যে সড়ক তৈরি না করে সুড়ঙ্গপথ চালু করা হলে এই প্রকল্পের পুরো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। সুড়ঙ্গপথটির কাজ দ্রুত শেষ হোক, সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু শুধু সুড়ঙ্গপথ নির্মাণই শেষ কথা নয়, এই প্রকল্প থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুফল ভোগ করুক, সেটাও প্রত্যাশিত। প্রায় ১১ বছর আগে মূল শহরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণের আগে কর্ণফুলী সেতু চালু হয়েছিল। সেই সেতুর সুফল নগরবাসী সবেমাত্র প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছে। কারণ, সম্প্রতি ওই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা বলতে চাই, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল যেন দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু উপাখ্যান না হয়। অবশ্য প্রস্তাবিত সড়কটি দ্রুত নির্মাণের গুরুত্ব কর্ণফুলী সেতুর উদাহরণকে বহুলাংশে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি স্টেশনসহ বহুবিধ শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। সুতরাং বিদেশি বিনিয়োগ ও বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে সুফল পেতেও ওই সড়কটি আমরা অবিলম্বে দেখতে চাই। তাই জরুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিন এখনই।