ইরানের সঙ্গে সংঘাত আর বাড়াবেন না ট্রাম্প!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগেই মার্কিন শীর্ষস্থানীয় একটি গোয়েন্দা সূত্র আমাকে একটি বিশদ প্রশ্নের উত্তরে এ বিশ্লেষণ পাঠিয়েছে:

‘ট্রাম্প সম্ভবত এ মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে আর কোনো সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবেন না এবং এটা তাঁকে উপসাগরীয় দেশগুলো বাদে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করার সুযোগ এনে দিতে পারে। ট্রাম্প আসলে বেরিয়ে যেতে চান। প্রকৃত ঘটনা হলো ইসরায়েল ইরানের পরবর্তী হামলার শিকার হতে পারে [যেমনটি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এবং হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন] এমনটা ভেবেই সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটছে এবং ট্রাম্প ইরানে বোমা মারার আর কোনো নির্দেশ দেবেন না।’

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ওয়েবসাইট দেবকা-মোসাদ স্বীকার করেছে যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকানোর অযোগ্য। এর গূঢ় বিষয়টি হলো এটি এত নিচে দিয়ে যায় যে কোনো রাডারে তা ধরা পড়ে না। গোয়েন্দা সূত্রটি হোভাইজেহ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে, যার পাল্লা হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার। তেহরান ইতিমধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ ইরাকি নাগরিককে হত্যা করতে দেখার পরও ইরাক তার দেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ লাখ ছিল শিশু। ১৯৯০–এর দশকে মেডেলিন অলব্রাইট এমনটাই স্বীকার করেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্র বলে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্যরা আমাকে বলেছিলেন এমনটা হয়েছে কারণ, ইরাক নাইজেরিয়ার চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।

সূত্র বলে, এখানে মূল প্রশ্নটি হলো ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় কী ঘটেছিল যার কারণে সেখানকার মার্কিন ঘাঁটিগুলোর জন্য উচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন হয়েছিল। ধরে নেওয়া যায় যে এটা সিরিয়ার খালি ভবনে ট্রাম্পের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলোর মতো ছিল না। তবে আমি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কাজ করার খবর পাইনি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

হোয়াইট হাউসের উপ প্রেস সচিব জুড ডিয়ার মঙ্গলবার রাতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের অংশীদারত্বের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাঁরা ইরাক ও ইরান নিয়ে আলোচনা করেন।

আমার নিজস্ব সোর্সের দেওয়া তথ্য অনুসারে, যিনি কাতারের রাজপরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ, ট্রাম্প আসলে কাতারের আমিরের মাধ্যমে তেহরানে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বার্তাটির দুটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তরে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন যে তেহরান কোনো প্রতিশোধ না নিলে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে তেহরান যদি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়, তাহলে তারা আর যুদ্ধে জড়াবে না।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলোকে ‘আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং এটি ব্যাখ্যা করে যে ট্রাম্প কেন মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার জন্য টিভি স্টেশনে যাননি।

আমরা এখনো বিশদ জানি না, কারণ, কেউ কথা বলছে না। তবে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রচুর উচ্চপর্যায়ের কূটনীতি চলছে। পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনে শুরু থেকেই ইরানের পাশে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ‘বেআইনি’ বলেও অবহিত করেছে দেশটি। গত অক্টোবরে রাশিয়ার একটি সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে ইরানের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইরান চীনের সঙ্গেও কথা বলছে, তবে অত্যন্ত সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে। এ ব্যাপারে অনেকেই একমত যে চীন হবে ইরানের ভবিষ্যৎ অংশীদার এবং দেশটি একসময় বিশ্ব আধিপত্যবাদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হবে। চীন ইতিমধ্যে ইরানে বিনিয়োগ করেছে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে চীন বিনা স্বার্থে ইরানে বিনিয়োগ করছে। তারা সেখানে প্রায় চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্যকেও মোতায়েন করতে যাচ্ছে। আজকের ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যে সামরিক শক্তি রয়েছে বা ২০২০ সালে আফগানিস্তানে যে শক্তি রেখে যেতে চায়, ইরানে চীনের নিরাপত্তা উপস্থিতি হবে তারই সমান। এসব কারণেও যুক্তরাষ্ট্র ইরান থেকে পিছু হটতে পারে।

তবে কারণ যা–ই হোক না কেন যুক্তরাষ্ট্র যে আপাতত ইরানের সঙ্গে আর কোনো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে না, এটাই সবচেয়ে স্বস্তির বিষয়।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
পেপে এসকোবার: ব্রাজিলের সাংবাদিক