দুবলারচরে খাওয়ার পানির সংকট

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের গর্ব। সুন্দরবন যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখছে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সুন্দরবন থেকে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ হয় মধু, মোম, গোলপাতা, মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, কাঁকড়া ও জ্বালানি কাঠ। অথচ যাঁরা এসব সংগ্রহ করে দিচ্ছেন, তাঁদের সুযোগ-সুবিধার দিকে কারও কোনো নজরই নেই।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বঙ্গোপসাগর তীরের দুবলারচরের জেলেপল্লিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে শুঁটকি তৈরির জন্য বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জেলে আসেন। তাঁদের সেখানে প্রায় পাঁচ মাসের জন্য থাকতে হয়। কিন্তু এখানে তাঁদের খাওয়ার পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সেখানে নেই কোনো পুকুর। পানির জন্য চরের বালু খুঁড়ে অনেক কষ্টে তাঁরা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন। ওই পানি খেয়ে জেলেরা নানা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য নেই কোনো হাসপাতাল। ফলে তাঁরা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে থাকেন। এ ছাড়া বনের দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি বঙ্গোপসাগরে ভাঙনে বিলীনের পথে রয়েছে। এতে সেখানকার বনজ সম্পদ ও জেলেদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের কর্মীরাও রয়েছেন প্রচণ্ড আতঙ্কে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় এই ফাঁড়ি চলে যেতে পারে সাগরগর্ভে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই।

শুধু দুবলারচরে নয়, গোটা সুন্দরবনেই বিরাজ করছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর সুন্দরবন অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র হতে থাকে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে এলাকার বেশির ভাগ পুকুরের পানি লবণাক্ত হয়ে ওঠে। বিকল্প অন্য সব পানির আধারও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে সে অর্থে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বছরজুড়েই জীবিকার টানে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে ছুটে আসেন জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ নানা পেশার লাখ লাখ মানুষ। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য এত দিনেও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা না করাটা হতাশাজনক।

এ ব্যাপারে সরকারের আর কোনো গাফিলতির সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন এলাকার মতো সুন্দরবন এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পানি পরিশুদ্ধকরণের যেসব পদ্ধতি আছে, সেগুলো ব্যয়বহুল হলেও সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। পাশাপাশি সরকারি চিকিৎসাসেবারও ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।