বিদ্যমান আইন ও মূলধারার উন্নয়ন কার্যক্রম: প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্পৃক্তকরণে করণীয়

গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ প্রথম আলোর আয়োজনে এবং সেন্টার ফর ডিজএ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) ও সিবিএমের সহযোগিতায় ‘বিদ্যমান আইন ও মূলধারার উন্নয়ন কার্যক্রম: প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্পৃক্তকরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ গোলটেবিলে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এ ক্ষেত্রে আইন ও বিধিবিধান আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও বিষয়টি রয়েছে। আজকের আলোচনায় আমরা আমাদের দুর্বলতা, পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রসমূহ ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব।

নাজমুল বারী
নাজমুল বারী

নাজমুল বারী
উন্নয়ন অগ্রযাত্রা স্থায়িত্বশীল করতে সরকার মূলত দুটো পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে কাজ করছে। ক. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।

২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে সম্পূর্ণরূপে বিমোচন করতে চাইলে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী মানুষকে বাদ দিয়ে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের হার ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ১৬ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ তালিকাভুক্ত হয়েছে। কাজেই এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে তাদের সক্ষমতা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী মানুষের সম–অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এ লক্ষ্যে সরকার আইন, নীতিমালা প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের বাজেট পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করছে সরকার।

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিখন–শিক্ষণ উপকরণ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের থেরাপি সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

সিডিডি সরকারের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সঙ্গে পঞ্চবার্ষিক ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনাকে প্রতিবন্ধিতা– বান্ধব করার লক্ষ্যে একটি গবেষণা করছে। এই কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই।

প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি ক্রসকাটিং ইস্যু। সুতরাং তা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দসহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষের চাহিদাকে বিবেচনায় এনে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থাকেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী উপযোগী করা প্রয়োজন।

অবকাঠামোগত প্রবেশগম্যতা সব মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনে। যাতায়াত, প্রযুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থাকেও প্রবেশগম্য করা প্রয়োজন। ওয়াটার পয়েন্ট ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষের কথা বিবেচনা করতে হবে।

নাছিমা বেগম
নাছিমা বেগম

নাছিমা বেগম, এনডিসি
প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার দীর্ঘদিনের। এর প্রধান কারণ আমার বড় ছেলে। আমি চাই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানবাধিকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে।

প্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসার বিষয়ে এখনো ঝাড়ফুঁকের বিষয়টি লক্ষণীয়। এখনো আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষ এখনো বিষয়টি বোঝে না। অনেকে মনে করে, শিক্ষিত ও ধনী পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশু বেশি জন্ম নেয়। এটা ভুল ধারণা।

আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তেমন কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। আমরা তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করার জন্য যথাযথ চিন্তাও করি না। যাঁদের অর্থ রয়েছে, তাঁরা প্রতিবন্ধী সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সেবায় সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু দরিদ্র মানুষের কী হবে? আমাদের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন আছে। সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের অভিভাবক নির্ধারণের বিষয়টি বলা আছে।

বিধিমতে, অভিভাবক নির্ধারণ করা হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী। কিন্তু আমার সন্তানের অভিভাবক কে হবে, তা সবচেয়ে ভালো বুঝব আমি। আমরা এই বিধি সংশোধন নিয়ে কাজ করছি।

আমাদের বিভিন্ন আইন আছে। এর বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। আইনের প্রয়োগ করতে গেলেই বোঝা যাবে কোথায় সংশোধন প্রয়োজন। আমাদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। এখন প্রয়োজন এর যথাযথ বাস্তবায়ন। বর্তমানে দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় এই কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন।

সব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষকে যুক্ত করার বিষয়টি চর্চা করা জরুরি। প্রতিবন্ধী মানুষের সক্ষমতা আছে। এটা সামনে আনতে হবে। এ সক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রতিবন্ধিতা নিরূপণের জন্য আর্লি স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।

খন্দকার জহুরুল আলম
খন্দকার জহুরুল আলম

খন্দকার জহুরুল আলম
প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রণয়নে প্রায় ১২ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষ তাদের মতামত দিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা চাই, যখনই কোনো পরিকল্পনা করা হবে, সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের কার্যকর অংশগ্রহণ থাকবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যেহেতু প্রতিবন্ধিতা বিষয় নিয়ে কাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাই আমাদের প্রত্যাশা, পঞ্চবার্ষিক ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি যুক্ত করার জন্য তারা আরও ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।

প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি পঞ্চবার্ষিক ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তাদের কাজে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি যুক্ত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তারা সফটওয়্যার তৈরি করছে, প্রশিক্ষণ প্রদান, চাকরি মেলা আয়োজনসহ নানা কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী মানুষকে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এটা সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়ে আসতে হবে।

জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মহীনতার কারণে জিডিপির ২ শতাংশ ক্ষতি হয়। এটা বাস্তবতা। তাই আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা এমন হওয়া উচিত, যা প্রতিবন্ধী মানুষকে সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কেবল সম্পৃক্ত করবে না, তাদের সক্ষমতাকে ব্যবহার করবে।

মো. শফিকুল ইসলাম
মো. শফিকুল ইসলাম

মো. শফিকুল ইসলাম
বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধিতাবান্ধব। আইন, পলিসি ও কর্মপরিকল্পনাকে প্রতিবন্ধিতাবান্ধব করার জন্য সরকার অনেক কিছু করছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।

পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সব সময় আমরা যথাযথ তথ্য পাই, এমন নয়। আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পৃক্ত করা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে তথ্যের ঘাটতি থেকে যায়।

সিআরপির অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বলতে চাই, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হলে ভালো হয়। পরিকল্পনাকে একেবারে স্থানীয় পর্যায় থেকে সক্রিয় করা প্রয়োজন। ইউনিয়ন, উপজেলা বা সিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে এ কাজ করা যেতে পারে। এতে প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক তথ্যের ঘাটতি যেমন পূরণ হতে পারে, তেমনি উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষের বহুমাত্রিক চাহিদাকে বিবেচনা করা সম্ভব হবে।

আমরা যখন প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলি, তখন শুধুই স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলি। এভাবে পুনর্বাসন, আবাসন বা পরিবহন সমস্যা নিয়েও আলাদাভাবে কথা বলি। তাই সমস্যাগুলো আলাদা আলাদাভাবেই থেকে যায়। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা, যেখানে সব বিষয় বিবেচনা করা হবে ও তার সমাধান হবে সমন্বিত প্রক্রিয়ায়।

আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন, যদি মানবিক কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে না পারি, তবে যতই বাজেট বরাদ্দ করা হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। 

জহির–বিন–সিদ্দিক
জহির–বিন–সিদ্দিক

জহির–বিন–সিদ্দিক
আমার প্রথম সুপারিশ থাকবে পরিকল্পনা নিয়ে যেকোনো আলোচনায় প্রতিবন্ধী মানুষ ও ডিজএ্যাবল পিপলস অর্গানাইজেশনের (ডিপিও) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কাজেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক বা প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

প্রবেশগম্যতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। এগুলো কীভাবে সবার জন্য প্রবেশগম্য করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রায় সব মন্ত্রণালয়ই প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি নিয়ে কোনো না কোনোভাবে কাজ করছে, সম্পৃক্ত আছে। কিন্তু তারা কাজ করছে যে যার মতো। এখানে একটি সমন্বয়ের দরকার। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করছে। প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী মানুষদের যুক্ত করার জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ব্যক্তি খাতে প্রতিবন্ধী মানুষের চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। তার জন্য দরকার সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। বর্তমানে ট্যাক্স রিবেট ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কারণে কিছু কারখানা প্রতিবন্ধী মানুষদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে। 

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভর্তি করাই শেষ কথা নয়। বরং প্রবেশগম্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষিত শিক্ষক, প্রতিবন্ধিতাবান্ধব শিখন–শিক্ষণ উপকরণের ব্যবস্থাও করতে হবে।

প্রতিবন্ধী মানুষদের যাঁরা শনাক্ত করছেন, তাঁদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমবিবিএস কোর্সের কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা আছে। তবে তার যথার্থ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

তাজকেরা খানম
তাজকেরা খানম

তাজকেরা খানম
আমি একজন প্রতিবন্ধী সন্তানের মা। আমার ছেলে বয়স এখন ৪০ বছর। আমার ছেলের জন্যই মূলত প্রতিবন্ধী মানুষকে নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হই।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিবন্ধী মানুষেরা যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও সেবা পাচ্ছে না। সরকারের অনেক পরিকল্পনার কথা শুনেছি। এগুলো ভালো। কিন্তু আইন,নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অধিকতর ও কার্যকর উদ্যোগ। এ জন্য সরকারের নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা দরকার।

মস্তিষ্কজনিত সমস্যার কারণে যেসব মানুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে, পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় তাদের অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তা না হলে সমস্যাগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করা যাবে না। প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি নিয়ে কেবল আলাদাভাবে নয়, সার্বিকভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।

শফিকুল ইসলাম
শফিকুল ইসলাম

শফিকুল ইসলাম
আমরা প্রতিবন্ধী মানুষের অন্তর্ভুক্তির কথা বলছি। কিন্তু অন্তর্ভুক্তি বলতে আমরা কী বোঝাচ্ছি, তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে সবকিছুই কেন্দ্রীভূত। কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের খুবই চমৎকার প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আমাদের বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, আদেশাবলি রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এগুলোর বাস্তবায়ন কেমন হচ্ছে, সেটা বড় প্রশ্ন। তাই বিকেন্দ্রীকরণের দিকে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে, একে শক্তিশালী করতে হবে।

আমাদের মূলধারার আইনে সুযোগ রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনের সুযোগ রয়েছে। অনেক স্থানে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হচ্ছে। অনেকগুলো ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রেখেছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে অনেক কিছুই সহজে করা সম্ভব হয়।

প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে কাজ করার জন্য দক্ষ পেশাজীবী জনশক্তির ঘাটতি আমাদের রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই ঘাটতি আরও প্রকট। ইশারা ভাষা বা ব্রেইল উপকরণ আমরা বিতরণ করছি, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এগুলো জানা মানুষ যদি না থাকে, তবে এর প্রচলন কীভাবে সম্ভব হবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রবেশগম্য করলেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে না। তাদের বাড়ি থেকে আসার রাস্তা যদি চলাচলের উপযোগী না হয়, তবে তাদের শিক্ষায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ইউএনসিআরপিডির (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিজএ্যাবিলিটি) স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করেছে, টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার (এসডিজি) আলোকে তার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। ইউএনসিআরপিডির যে আটটি প্রিন্সিপাল রয়েছে, তার আলোকে আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি? এই দুটি ডকুমেন্টে প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। তার জন্য কী সমন্বিত পরিকল্পনা করা হয়েছে?

প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত করতে হলে প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠনকে (ডিপিও) প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে। তাই প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি পরিকল্পনায় যুক্ত করার জন্য সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতে হবে।

মুহম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা
মুহম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা

মুহম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কেবল পরিকল্পনায় নয়, বরং তদারক প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী মানুষের যথাযথ অংশগ্রহণ জরুরি। আর এটা হতে হবে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। এর জন্য তাদের তদারকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক বরাদ্দে প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণের সঙ্গে তার কেয়ারগিভার, যাতায়াত খরচের মতো খাতগুলোতে বরাদ্দ প্রদান করা জরুরি। শুমারিতে প্রতিবন্ধী মানুষের তথ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পাইলট প্রকল্প করেছে। এতে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যুক্ত করা দরকার।

অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে যেখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ডিপিওর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণের মাত্রা অনেক বেশি। একে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। 

প্রতিবন্ধী মানুষকে বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে মূলধারার প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করতে হবে, যেন একই স্থান থেকে সব ধরনের সেবা পেতে পারে।

প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্যোগঝুঁকি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা পরিকল্পনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্পৃক্ত করতে পারলে সহজেই প্রতিবন্ধী মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করা সম্ভব হবে।

সৈয়দা আসমা রশিদা
সৈয়দা আসমা রশিদা

সৈয়দা আসমা রশিদা
প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি নিয়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন আমাদের সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার সময় এসেছে। আগেই বলা হয়েছে, ১০৩টি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষকে বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষ শুধু এসব কেন্দ্রেই যাবে না। তাই সব মূলধারার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যেন প্রতিবন্ধী মানুষ সেবা পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে যে বাজেট রাখা হয়, তা কোন জায়গায় কতটুকু খরচ হচ্ছে, সে সম্পর্কে আমরা পরিষ্কার কোনো ধারণা পাই না। স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী মানুষ যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইনে বিভিন্ন কমিটি কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক স্থানেই এসব কমিটি কার্যকর নয়। ফলে প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে যে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা, তাতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও সবাই দক্ষ মানুষ নিয়োগ দিতে চায়। সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রয়েছে। 

এসব কার্যক্রমকে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য যুগোপযোগী করা গেলে প্রতিবন্ধী মানুষ দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর দরিদ্র মানুষের ২০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষ।

বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করছে। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষের দারিদ্র্য কতটুকু বিমোচন হচ্ছে, তা পরিমাপ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

রাবেয়া সুলতানা
রাবেয়া সুলতানা

রাবেয়া সুলতানা
প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি পুরো লাইফ সাইকেল নিয়ে কথা বলতে চাই। শিশুর জন্মগ্রহণ থেকে বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি আমি ধরতে চাই, যার যেকোনো পর্যায়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি আসতে পারে।

আমরা বয়স, লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধিতাভিত্তিক পরিসংখ্যানের কথা বলছি, কিন্তু এর সঙ্গে সব সেবায় বয়স অনুযায়ী সেবার বিন্যাস করারও প্রয়োজন আছে, যা আমাদের বিবেচনা থেকে অদৃশ্য থাকে।

আমরা যদি জরুরি মানবিক কার্যক্রমের দিকে তাকাই, তবে দেখব যে শিশু বা অন্যান্য প্রতিবন্ধী মানুষের কথা চিন্তা করা হচ্ছে, কিন্তু বয়স্ক প্রতিবন্ধী মানুষের কথা বিবেচনা করে সেবা প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে না।

যেকোনো সেবা পরিকল্পনায় বয়স্ক প্রতিবন্ধী মানুষের চাহিদাকে বিবেচনা করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিবন্ধী নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর ৪৭ শতাংশ বয়স্ক মানুষ এক বা একাধিক প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বসবাস করছেন।

তাই আমরা যদি আমাদের পরিকল্পনা, আলোচনা ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে এসে থামিয়ে দিই, তাহলে উন্নয়নের মূলধারায় সব মানুষকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে না।

প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আমরা বিশেষায়িত যে সেবাই প্রদান করি না কেন, তার জন্য ন্যূনতম মান নির্ধারণ করতে হবে। জবাবদিহি, মনিটরিং করার মতো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা আবশ্যক। আর সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

শেখ হামিম হাসান
শেখ হামিম হাসান

শেখ হামিম হাসান
এ ধরনের আলোচনা থেকে আমরা দুভাবে উপকৃত হতে পারি—সংশ্লিষ্ট বিষয়কে জেনে নিজের জানাকে সমৃদ্ধ করতে পারি, যা পরবর্তী সময়ে নির্বাহী কাজে সাহায্য করে। আর আমাদের কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কাজ করা প্রয়োজন, তা নির্দেশ করে।

বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও সরকার অন্যান্য অনেক কাজের সঙ্গে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।

আপনারা বলেছেন ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কথা। পর্যায়ক্রমে আরও ৫৯টি কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এসব কেন্দ্রে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নেই। এর অন্যতম কারণ, আমাদের দেশে এ ধরনের সেবা দেওয়ার জন্য দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার।

বাংলাদেশে রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অ্যাক্ট পাস হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সেবার মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, তেমনি দক্ষ পেশাজীবী তৈরি বা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সুরক্ষা ও অধিকার আইন–২০১৩ বাস্তবায়নে সরকার প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। বর্তমানে সরকার এর বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একে সব মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে সমন্বিত করা গেলে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সহজতর হবে।

তা ছাড়া প্রবেশগম্যতা, সহায়ক উপকরণের মতো বিষয়গুলো যাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তার ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা সমন্বিত শিক্ষা নীতিমালা–২০১৯ নিয়ে কাজ করছি।

এ এইচ এম নোমান খান
এ এইচ এম নোমান খান

এ এইচ এম নোমান খান
বাংলাদেশের একটি বড় শক্তির জায়গা হলো আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করছি। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে ডেলটা প্ল্যান, যার মাধ্যমে আমরা শতবার্ষিক পরিকল্পনা করার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

প্রতিবন্ধিতা নিয়ে গত ২০ বছরের কার্যক্রম দেখলে বুঝতে পারব, আমাদের ইতিবাচক বিবর্তন হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন হয়েছে, হয়েছে এনডিডি ট্রাস্ট আইন। বাংলাদেশ যখন এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করছে, সেখানে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে।

বিভিন্ন নীতিমালা, আদেশাবলিতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বিদ্যমান আইন, নীতিমালার ক্ষেত্রে এই উপমহাদেশে বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্যতম।

এবার আমরা যদি এর বাস্তবায়নের দিকে তাকাই, তবে দেখা প্রয়োজন, আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী পেয়েছি? এর পরিপ্রেক্ষিতে আর কী করা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া থাকা উচিত। এর ভিত্তিতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টিকে কীভাবে ক্রসকাটিং সর্বজনীন করা যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে।

আমরা অনেকেই মনে করি, প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তাদের দায়িত্ব আরও বিস্তৃত। সবাইকে নিয়ে প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব তাদের হাতে।

আর এ জন্য যে প্রক্রিয়াগুলোর কথা আইনে বলা হয়েছে, সেগুলোকে অধিকতর কার্যকর করা প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহি ও তদারকের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

ফিরোজ চৌধুরী 
আজকের আলোচনার সুপারিশগুলো সরকারের নীতিনির্ধারণী অবস্থান থেকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশা করি।

সমন্বতিভাবে কাজ করার যে সুপারিশ এসেছে, সেটা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আলোচনায় সুপারিশ

■ উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষ ও তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন

■ প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়ক উপকরণের ন্যূনতম মান নির্ধারণ করা ও সহজলভ্য করা দরকার

■ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজের কাজ নিজেকে করতে দেওয়া ও তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা প্রয়োজন

■ প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে

■ অবকাঠামোগত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন

■ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করতে হবে। এতে প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণ করা যাবে

■ প্রতিবন্ধী মানুষ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের মানুষদের আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে

■ প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

যাঁরা অংশ নিলেন 

নাছিমা বেগম, এনডিসি: চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ 

এ এইচ এম নোমান খান: নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজএ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) 

শেখ হামিম হাসান: পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন 

মুহম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা: কান্ট্রি ডিরেক্টর, সিবিএম বাংলাদেশ কান্ট্রি কো–অর্ডিনেশন অফিস 

খন্দকার জহুরুল আলম: নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজএ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) 

রাবেয়া সুলতানা: কান্ট্রি ডিরেক্টর, হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ 

সৈয়দা আসমা রাশিদা: সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, সাইটসেভার্স বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস 

জহির–বিন–সিদ্দিক: কান্ট্রি ডিরেক্টর, লিওনার্ডো চেসার (এলসি) 

মো. শফিকুল ইসলাম: নির্বাহী পরিচালক, সিআরপি, সাভার

শফিকুল ইসলাম: কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল

তাজকেরা খানম: সদস্য, এনআইআইডিএ কমিটি, সুইড বাংলাদেশ

নাজমুল বারী: পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজএ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) 

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী: সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো