সুনামগঞ্জ হাওরে বাঁধ

সুনামগঞ্জ হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ উদ্বেগজনকভাবে চলছে। উন্নয়নকাজ যে সব সময় সুখকর অভিজ্ঞতা বয়ে আনে না, তার বড় প্রমাণ সুনামগঞ্জ। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৭২৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫৬টিতে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্যরা সম্ভবত একমত যে, কাজের চেয়ে অকাজ কম হচ্ছে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ, কারণ তারা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। কিন্তু প্রতীয়মান হয় যে, অনেক প্রকল্পই রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, লুটপাটের উদ্দেশ্যেই কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন এসব প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা এবং সেগুলো বন্ধ করা দরকার। তবে এটা শুধু জেলা প্রশাসনের পক্ষে নিশ্চিত করা কঠিন। এই বিষয়ে হাওর এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাসীন দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সততার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।

তবে আমরা মনে করি, গত রোববার সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনিয়মবিরোধী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সভায় নির্দিষ্টভাবে অনিয়মের উল্লেখ করেছেন। নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, কিছু প্রকল্প তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়। প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে, যা যাচাইযোগ্য।

স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বাঁধ নির্মাণ কাজের অভিযোগ নিষ্পত্তিকারী হিসেবে একজন কর্মকর্তা আছেন। তিনিও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া এবং এমনকি ভুয়া প্রকল্প নেওয়ারও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আছে। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত তারা নিতে অপারগ থেকেছে, সেটা হলো কবে কখন কার বিরুদ্ধে কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, সেই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। তাদের উচিত দ্রুত দুর্নীতিবিরোধী কমিটি গঠন করা। এবং অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সন্দেহভাজন প্রকল্পগুলোর কাজ বাস্তবায়ন স্থগিত করা।

 সভার এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যখন দাবি করা হয় যে, ‘যারা’ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের সমর্থক ও প্রস্তাবক, তাঁরাই দায় নেবেন, জেলা প্রশাসন নেবে না। এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী বা তাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজনই হলো সমর্থক ও প্রস্তাবক। ক্ষমতাসীন দলের আঞ্চলিক মুরব্বি ও কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির হস্তক্ষেপ ছাড়া এই গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করা দুরূহ। তবে ঝুঁকি সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারবেন না। কারণ, প্রশাসনের বাস্তব সহযোগিতা ছাড়া কোনো সরকারি প্রকল্পের অর্থ ছাড়করণ সম্ভব হয় না।

আমরা এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আশু মনোযোগ আকর্ষণ করি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, হাওর অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় অর্থের এমন নয়ছয় সংশ্লিষ্ট সবার জানাশোনার মধ্যে চলমান রয়েছে।