নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু

দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। খবরটি অতিশয় দুশ্চিন্তার কারণ, এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ৭৭ শতাংশ। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, আক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো কোনো টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। সচেতনতা ছাড়া আপাতত আর কোনো রক্ষাকবচ মানুষের হাতে নেই। ফলে আক্রমণ থেকে বাঁচার চেষ্টাই এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করণীয়।

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার শুঙ্গাই নিপাহ গ্রামে নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণ প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। ওই গ্রামের নামানুসারেই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। ভাইরাসটির মুখ্য বাহক হচ্ছে ফলভোজী ফ্লাইং ফক্স শ্রেণির বাদুড়। এই বাদুড়ের মূত্র, বিষ্ঠা, লালা কিংবা শুক্রাণুতেও ভাইরাসটি বাস করতে পারে। মরার সময় এই বাদুড়ের দেহ নিঃসৃত পদার্থ পরিবেশে ছড়ালে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা দেখা দেয়।

বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের মূলে চিহ্নিত হয়েছে খেজুরের রস পান। শীতকালে খেজুরের গাছে এবং রসে বাদুড়ের স্পর্শ স্বাভাবিক। বাদুড় রাতের বেলায় খেজুরের রসের নালি থেকে চেটে চেটে রস খায়। ওই স্পর্শে তার দেহ নিঃসৃত পদার্থ খেজুর রসকে কলুষিত করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করেছে। তারা বলছে, পেয়ারাজাতীয় ফল থেকেও একইভাবে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। ফ্লাইং ফক্স বাদুড় ধারালো দাঁত দিয়ে ফল খায়, কিন্তু পুরো ফল খাওয়া শেষ না করেই উড়ে যায়। এ জন্য ফলের গায়ে দাঁতের দাগ থাকলে বা কোনো পাখির ঠোঁটের দাগ বা কোনো আঁচড়ের দাগ দেখলে সেই ফল খাওয়া উচিত নয়। ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নিপাহ আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত এমন হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, যেখানে রোগীকে সবার থেকে আলাদা রাখার ও ইনটেনসিভ সাপোর্টিভ কেয়ারের ব্যবস্থা আছে। জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া নিপাহর লক্ষণ। রোগী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থানে পাঠাতে হবে।

বোঝা যাচ্ছে, এই তথ্যগুলো জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সচেতন করে তোলা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে নিপাহ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। তবে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে এই তথ্যগুলো পৌঁছে দেওয়ার কতটুকু সম্ভব হয়েছে, তা ভেবে দেখা এবং তদনুযায়ী প্রকল্প প্রণয়ন জরুরি।