ই-পেনশন হোম ডেলিভারি

সারা জীবন ছাত্র পড়িয়ে অবসর-উত্তর ছুটির (পিআরএল) আদেশ পেতে ও পেনশন আদায় করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জুতার সুকতলা ক্ষয়ে যায়—এই অভিযোগ দীর্ঘকালের। শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পেতে তাঁদের অশেষ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়, কারণ এর জন্য তাঁদের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়।

এই দীর্ঘসূত্রতায় দাঁড়ি টানার অভিনন্দনযোগ্য সম্ভাবনা দেখিয়েছে বাগেরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এখন থেকে ঝঞ্ঝাট ছাড়াই অবসর-উত্তর ছুটির আদেশ পাবেন, পেনশন তুলতেও তাঁদের বারবার অফিসে যেতে হবে না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের এই সেবা দেবে। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ‘ই-পেনশন হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করা হয়েছে।

শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার সময় হলে পিআরএল, পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-মেইলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ অফিসে চলে যাবে। পাশাপাশি ওই শিক্ষক তাঁর ই-মেইল এবং ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্সে আদেশটি পেয়ে যাবেন। এতে কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই অবসর-উত্তর ছুটিতে চলে যেতে পারবেন তাঁরা। একইভাবে নির্দিষ্ট সময়ে আনুতোষিক (অবসর-উত্তর ছুটি শেষ হওয়ার পরে এককালীন টাকা) পেয়ে যাবেন। প্রতি মাসে তিনি পেনশনও পাবেন নিয়মিত। শিক্ষকদের আর বারবার অফিসে যেতে হবে না।

এরই মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আগামী এক বছরের মধ্যে যেসব শিক্ষক অবসরে যাবেন, তাঁদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। অনলাইনে শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট ফরমও দেওয়া হয়েছে। ওই ফরমে শিক্ষকেরা তাঁদের নাম, পদবি, সর্বশেষ কর্মরত বিদ্যালয় ও পিআরএলে যাওয়ার তারিখ, পিআরএল আদেশ পাঠানোর জন্য মুঠোফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা চাওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা এ ফরম পূরণ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেবেন। এর স্ব স্ব উপজেলা শিক্ষা অফিস তাঁর উপজেলার তালিকা জেলায় পাঠাবে।

‘ই-পেনশন হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামের এই সেবা উদ্ভাবন করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবির উদ্দিন। সীমিত জনবল কাঠামো দিয়ে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া অকুণ্ঠ প্রশংসার দাবি রাখে।

দেশে এটিই প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের অবসর-উত্তর ছুটি, পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ প্রদানের উদ্যোগ। এই মডেলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে মানুষ গড়ার কারিগরেরা অবসরে গিয়ে বহু বিড়ম্বনার হাত থেকে রেহাই পাবেন। সরকারের উচিত এই মডেল দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে শিক্ষকদের পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরির বিষয় সহজ ও সরল হয়ে উঠতে পারে।