সিলেটে উন্নয়নকাজে ধীরগতি

উন্নয়নকাজের প্রকল্প নেওয়া হয় জনগণের সুবিধার জন্য। সেই জন্য সাময়িক অসুবিধা হলেও জনগণ তা মেনে নেয়; কিন্তু সিলেট নগরে বিভিন্ন উন্নয়নকাজে পরিকল্পনাহীনতা ও ধীরগতির কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য।

শনিবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডেই নালা বর্ধিতকরণ, কালভার্ট স্থাপন, ফুটপাত নির্মাণসহ কমবেশি উন্নয়নকাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে না হয়ে একসঙ্গে উন্নয়নকাজ চলায় নগরজুড়ে নানা রকমের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

সারাক্ষণ ধুলায় ধূসর থাকছে এলাকা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলকাদায় একাকার হয়ে পড়ে। নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার প্রধান সড়কের পাশের নালা বর্ধিতকরণের কাজ শুরু হয় প্রায় সাত মাস আগে। অথচ আধা কিলোমিটার অংশের কাজও শেষ হয়নি। সুবিদবাজার এলাকার নালানর্দমা বর্ধিতকরণ প্রকল্পের আওতায় নর্দমা ও তার আশপাশের মাটি খুঁড়ে প্রধান সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। ফলে সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কাজল শাহ এলাকার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে। বন্দরবাজার, চৌহাট্টা ও জিন্দাবাজার এলাকায় নালা প্রশস্তের কাজ শেষ হলেও সড়কের সঙ্গে নালার সংযোগ অংশ এখনো সংস্কার করা হয়নি। এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। ব্যবসা-বাণিজ্যর ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ক্ষেত্রে কোনো নজরদারি নেই।

একটি নগরে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনায় না নিয়ে এভাবে পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কোনো অর্থ নেই। তবে শুধু সিলেটে নয়, সারা দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের চিত্র প্রায় একই রকম। বলা হয়, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার উল্টোটাই দেখা যায়। প্রকল্প গ্রহণ থেকে তার বাস্তবায়ন, প্রতিটি স্তরেই দুর্বল পরিকল্পনা, দক্ষতার ঘাটতি ও গাফিলতি থেকেই যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভাগাভাগিতে বেশি দৃষ্টি দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ পর্যন্ত চলে অবাধ দুর্নীতি। দরপত্রের মাধ্যমে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক হীন স্বার্থের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দেয় এবং এর ফলে খরচ বাড়ে প্রকল্পের। পকেট ভরে প্রকল্প–সংশ্লিষ্টদের আর পকেট কাটা যায় সরকারের, তথা জনগণের।

আমাদের দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। কর্তব্যে অবহেলার জন্য যদি তারা শাস্তি পেত, তাহলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ রকম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করত না।

 আমরা চাই, সিলেট নগরসহ দেশের সব স্থানের উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন হোক। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবারই
উচিত জনভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।