সৈয়দপুরে নিরাপদ সবজি চাষ

মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর সংকল্পে এক জোট হয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সোনাখুলি হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষক যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সোমবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, কৃষি বিভাগের পরামর্শে সোনাখুলি হিন্দুপাড়া গ্রামের প্রায় ২০ জন কিষান-কিষানি গত শীত মৌসুম থেকে রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়াই সবজি আবাদ করছেন। জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গৃহস্থালি বর্জ্য দিয়ে তৈরি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো সার। কীটপতঙ্গ দমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, যা কিনা একেবারেই পরিবেশবান্ধব। তাঁদের এই প্রচেষ্টার কারণে সোনাখুলি হিন্দুপাড়া গ্রামটি এখন ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ বা ‘অরগানিক কৃষি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

শাকসবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার আমাদের দেশে খুবই সাধারণ ঘটনা। বেশি ফসল উৎপাদনের আশায় কৃষক এগুলো ব্যবহার করেন। কিন্তু এভাবে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে মানুষ ফুসফুসের ক্যানসার, চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত তো হচ্ছেই, পাশাপাশি জমিও তার উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এ ছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এগুলো ফসলি জমিতে যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে দেশের নদ-নদী ও জলাশয়ের পানির গুণাগুণ নষ্ট করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রকার দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে গেছে।

দেশের শস্যখেতে ৬০৭ ধরনের পোকা দেখা যায়। এর মধ্যে মাত্র ২৩২টি বা ৩৮ শতাংশ পোকা ফসলের জন্য ক্ষতিকর। বাকি ৬২ শতাংশ কীটপতঙ্গ বা পোকা ফসলের জন্য সরাসরি বা পরোক্ষভাবে উপকারী। এর মধ্যে ১৮৩টি, অর্থাৎ ৩০ শতাংশের বেশি পোকা সরাসরি ফসলের জন্য উপকারী। এরা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসল রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নির্বিচার কীটনাশকের ব্যবহারে এসব উপকারী পোকাও ধ্বংস হয়ে যায়। সোনাখুলি হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষক যে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং সে অনুযায়ী উদ্যোগ নিয়েছেন, সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ।

এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অন্য এলাকার কৃষকও নিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কেননা, দেশের বেশির ভাগ কৃষকের এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতেই ফসল উৎপাদন করছেন। তাই দেশের সব স্থানে নিরাপদ সবজি চাষ চালু করতে হলে কৃষককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষি বিভাগ অবশ্য দেশের অনেক স্থানে নিরাপদ কৃষি গ্রাম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই, গোটা দেশেই নিরাপদ সবজি চাষের কার্যক্রম চালু করা হোক। সবাই বিষমুক্ত সবজি খেয়ে সুস্থ জীবনযাপন করি।