মেয়রদের বিলম্বিত দায়িত্ব গ্রহণ

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর বেসরকারি ফলাফলও ঘোষিত হয়েছে। বেসরকারি ফল ঘোষণার পর শিগগিরই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটি আইনি স্বীকৃতিও পাবে বলে আশা করা যায়। আইনানুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির এক মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নেবেন। কিন্তু শপথ নেওয়ার পরপরই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নিতে পারছেন না। তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন মাসের বেশি সময়।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন গঠনের পর এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই বছরের ১৪ মে হয় ডিএনসিসির প্রথম সভা এবং ১৭ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রথম সভা হয়। সে ক্ষেত্রে উত্তরে আতিকুল ইসলামকে ১৪ মে এবং দক্ষিণে ফজলে নূর তাপসকে ১৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর অর্থ, দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা মেয়র নির্বাচিত করলেও আগামী তিন মাস তাঁরা অভিভাবকহীন থাকছেন। তাহলে আগেভাগে নির্বাচন করার যৌক্তিকতা কী। নগরবাসী ভেবেছিলেন যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত তাঁরা নতুন মেয়র পাবেন। কিন্তু আইনি বাধা ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রার্থী হওয়ার জন্য আগেই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের সময় তিনি কাউকে দায়িত্ব দেননি; যদিও সেখানে একটি প্যানেল মেয়র আছে। দক্ষিণে যিনি বর্তমানে মেয়র আছেন, তাঁর প্রতি তাঁর দল আওয়ামী লীগই অনাস্থা প্রকাশ করে নতুন আরেকজনকে মেয়র প্রার্থী করেছে। এ অবস্থায় বিদায়ী মেয়রের কাছে উপযুক্ত সেবা পাওয়ার আশা করা কঠিন।

আইন অনুসারে করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৬ মাসের (১৮০ দিন) মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে মেয়াদের শেষ পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে নির্বাচন করতে হবে। মেয়াদের শেষের দিকে নির্বাচন হলে নগরবাসীকে বেশি দিন অভিভাবকহীন থাকতে হয় না। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার এককভাবে কমিশনের হলেও স্থানীয় সরকার সংস্থার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে হয়। তারা চাইলে ১৮০ দিন বাকি থাকতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হতে পারে, না চাইলে বছরের পর বছর নির্বাচন আটকে রাখা হয়। স্থানীয় সরকার বা শাসনব্যবস্থায় এই দ্বৈতনীতি পরিহার করা প্রয়োজন। অনেকের মতে, উত্তরে যেহেতু সিটি মেয়রের পদটি শূন্য আছে, সেহেতু চাইলে আতিকুল ইসলাম আগে দায়িত্ব নিতে পারেন। কিন্তু মেয়র একা তো কাউন্সিল নন। বর্তমানে উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত কাউন্সিলররাও আছেন, যাঁরা আগের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত। আগের মেয়াদের নির্বাচিত কাউন্সিলররা নতুন মেয়াদের কাউন্সিলের সদস্য হতে পারেন না।

নির্বাচনের আগে নগরবাসীর স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল নতুনভাবে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ১৪ বা ১৭ মের আগে তাঁরা দায়িত্ব নিতে পারছেন না। দুই মেয়র দায়িত্ব না নিলে কাউন্সিলররাও দায়িত্ব নিতে পারছেন না। কেননা, মেয়র ও কাউন্সিলর নিয়েই সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরাও সমস্যাটি জানতেন। কিন্তু তারপরও তাঁরা আগেভাগে নির্বাচনটি করে একটি স্থবির পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। নগরবাসীর সেবার বিষয়টি বিবেচনায় থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়। 

এই সময়ে নাগরিক সেবা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার বাড়তি মনোযোগ দরকার।