কয়রায় বেড়িবাঁধ ভাঙন

ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে ১০ বছর আগে খুলনার কয়রায় সব হারিয়ে বেড়িবাঁধে ঠাঁই নিয়েছিল পাঁচ শতাধিক পরিবার। সেই থেকে সেখানেই তাদের সংসার। আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি তারা। এরপর এল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত। ওই সময় বেড়িবাঁধ ভাঙল। গোটা উপকূলের জমিতে লোনাপানি ঢুকে গেল। সেখানে এখনো জমি লবণাক্ত। ঠিকমতো ফসল হয় না। পুকুরেও লোনাপানি। খাওয়ার পানি নেই। বাঁধের ওপর এবং আশপাশের গ্রামে বাস করা জনগোষ্ঠী ‘ভাতে মরছে, পানিতে মরছে’।

পরিতাপের বিষয়, যে বেড়িবাঁধকে রক্ষাকবচ মনে করে কয়রার মানুষ টিকে থাকার চেষ্টা করছে, সেই বাঁধ এখনো হুমকিতে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো প্রতিবছরই কোনোমতে মেরামত করা হয়, কিন্তু স্থায়ী মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। জোড়াতালির বাঁধ বারবার ভাঙনে পড়ে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে ২ নম্বর কয়রা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ছোবলে কয়েক মুহূর্তে প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কপাল ভালো, ভাটার টানে বাঁধ ভেঙেছিল। জোয়ার আসার আগেই গ্রামবাসী সারা রাত ধরে চেষ্টা করে ভাঙা বাঁধ ঠিক করতে পেরেছেন। ভাটা থাকায় লোকালয়ে লোনাপানি ঢুকতে পারেনি।

কথা হলো, কপোতাক্ষের এই ছোবল বারবার রুখে দেওয়ার সামর্থ্য সাধারণ মানুষের নেই। অবিলম্বে সরকারি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ওই এলাকা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পাউবো কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শন করে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মসূচির আওতায় বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরুও করা হয়েছে, কিন্তু এ রকম দায়সারা কাজে কাজ হবে না। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, ওই স্থানসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে পাথরের ব্লক ফেলা দরকার।

আরেকটি বিষয় হলো, প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণী উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙানো দরকার। সাইনবোর্ড না থাকায় এর আগের বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে এলাকাবাসী কিছুই জানতে পারেনি। এর সুযোগ নিয়ে ঠিকাদার ও পাউবোর অসাধু কর্মকর্তারা বেড়িবাঁধের কাজে ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এই অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্য বাঁধের প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙানো দরকার। কাজের বিবরণী, প্রকল্পের মেয়াদ, বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও কত টাকা মূল্যের কাজ—সব তথ্য উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙানো হলে যেনতেনভাবে বাঁধ নির্মাণের সুযোগ কমে আসবে।

পাউবোর মনে রাখা দরকার, কয়রার বুক চিরে বয়ে যাওয়া কয়রা, শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ—তিনটি নদ–নদীই বঙ্গোপসাগর সন্নিহিত। ফলে তিনটিই প্রমত্তা। এ কারণে দেশের অনেক সাধারণ এলাকায় যে আটপৌরে দৃষ্টিভঙ্গিতে বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারকে দেখা হয়, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে কয়রার বেড়িবাঁধ সংস্কারকে দেখতে হবে। সেই অগ্রাধিকার বা সংবেদনশীলতা এখানকার মানুষের প্রাপ্য।