ব্যর্থতা থেকে কি শিক্ষা নেবেন ইমরান খান?

ইমরান খান। ছবি: ফাইল ছবি
ইমরান খান। ছবি: ফাইল ছবি

বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে এই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরাসরি হস্তক্ষেপ খুব একটা কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য 

হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, তাঁর ১৮ মাসের পুরোনো সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে এ ধরনের পদক্ষেপ আগেও নিয়েছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হয়নি। চলমান এই সংকটের আড়ালে যা রয়েছে তা হলো নীতিগত ব্যর্থতা এবং ধারাবাহিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার মিশ্রণ।
সম্মিলিত এই ব্যর্থতা পাকিস্তানের জনগণকে যারপরনাই হতাশ করেছে।

পাকিস্তানের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১৮ মাস পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর দলের কেউ কেউ অবশ্য দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য যে নওয়াজ শরিফের শেষ সরকারের অপরিণামদর্শী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা দায়ী, তা অব্যাহতভাবে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু তাঁদের সেই চেষ্টা খুব একটা কাজে আসছে না। আজকের সংকটটি বর্তমান সরকারের অনেকগুলো ব্যর্থতার চূড়ান্ত পরিণতি। যদি ইমরান খান প্রকৃত অর্থে ব্যর্থতাগুলোর মূল্যায়ন করতে বসেন, তাহলে এ থেকে তাঁর অনেক কিছু শেখার আছে।

প্রাথমিকভাবে ইমরান খানকে এটা মেনে নিতে হবে যে এই সংকট পিটিআইয়ের আমলেই সৃষ্টি হয়েছে। গমের ঘাটতির কারণে—সত্য হোক বা না হোক, কয়েক মাসের ব্যবধানে পাকিস্তানের কিছু এলাকায় এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে চিনির ঘাটতি ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কুখ্যাত কিছু রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে বিরোধীদের তদন্তের দাবিকে আরও উসকে দিয়েছে।

আসন্ন মাসগুলোতে জনগণের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়বে না, এমন পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও গম ও চিনি বাইরের দেশে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ছিল? এই প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি, যদিও সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে। একটি সমন্বিত তদন্ত কেবল গত ছয় মাসের নয়, অবশ্যই ইমরান খানের শাসনের ১৮ মাসে ঘটা সব ঘটনার তদন্ত করতে হবে। কেবল পণ্যের সরবরাহ ও চাহিদা নিরূপণের ক্ষেত্রেই নয়, ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া কৃষি খাতেও পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

গত বছর মূল ফসলের পাশাপাশি তুলার ফলনে বিপর্যয় পাকিস্তানের গ্রামীণ কৃষক ও জনগণের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। সরকার কেন কৃষককে যথেষ্ট সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়েছে—সে ব্যাপারে অবশ্যই তদন্ত ও একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন হওয়া উচিত। কেননা, সরকারের এই ব্যর্থতার কারণে প্রধান প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন অনেক কম হয়েছে এবং সম্ভবত পাকিস্তানের ইতিহাসে কৃষি আয়ের ক্ষেত্রে ভয়াবহ মন্দা ডেকে এনেছে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুর্বল কাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার কারণও খুঁজে বের করতে হবে। উদ্বেগজনকভাবে দেশের কিছু অংশ রাষ্ট্রের উপাদানগুলোর দায়িত্ব ত্যাগ করার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে এবং অপর অংশ শাসন কাঠামোর নামমাত্র কর্তৃত্ব প্রত্যক্ষ করেছে। এই প্রবণতার বিপরীত পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যাতে রাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রে পুনরায় মনোযোগ নিবদ্ধ করে। প্রাথমিকভাবে এ জন্য পাকিস্তানজুড়ে খাদ্য সুরক্ষার ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে আলোকপাত করা দরকার এবং এই উদ্দেশ্যটি পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো যথাযথ স্থানে যথাযথভাবে রাখতে হবে।

এটা স্পষ্ট যে আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মূল্যায়নের জন্য সরকারের সক্ষমতা সে অর্থে নেই এবং এ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। ইসলামাবাদে পরিকল্পনা বিভাগ, একসময় যা সব নীতিগত সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হতো, স্পষ্টভাবে তার মর্যাদা হারাতে বসেছে। গত বছর এই বিভাগটি নীতিকাঠামো গঠনে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিল, অথচ এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশটি একটি ভিন্ন এবং একটি হতাশাজনক চিত্র উপস্থাপন করে। একই ধরনের চিত্র প্রদেশজুড়ে বিরাজ করছে, বিশেষত পাঞ্জাব, যা শাসন করছে পিটিআইয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। একসময় পাকিস্তানের ব্যাপক খাদ্যশস্য উৎপাদনের অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এই প্রদেশের বর্তমান প্রশাসন তার কৃষি এবং খাদ্যপণ্যের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এখন পাঞ্জাবের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর সরকারের ভবিষ্যতের জন্যও এটা খুব প্রয়োজন।

ইমরান খান অবশ্য পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে বাঁচানোর চেয়ে অনেক বড় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। চূড়ান্ত প্রশ্নটি কেবল একটি: প্রধানমন্ত্রী কি তাঁর সরকারের বড় বড় ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেবেন?

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ফারহান বোখারি: পাকিস্তানি সাংবাদিক