ঢাকায় নারী আবাসন

নগর মানে একা মানুষের নিরাপদ ও স্বাধীন আশ্রয়। কিন্তু যে মেয়েটির পরিবার নেই ঢাকা শহরে, যে কর্মজীবী নারীকে একা থাকতে হয়, তার জন্য সবই দুর্লভ। ঢাকায় পাড়ায় পাড়ায় নারী হোস্টেল, ছাত্রীদের মেস ইত্যাদি গড়ে উঠলেও সেখানে নিরাপত্তা আর মর্যাদার টানাটানি চলতেই থাকে। ঢাকায় সরকারি হোস্টেলে নারীদের থাকার আসন মাত্র ১ হাজার অথচ দেশের শহরাঞ্চলে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। এঁদের করুণ ও কঠিন পরিস্থিতি লাঘবের কোনো চিন্তা কি সরকারের আছে? সরকারের রয়েছে আবাসন, নারী, শিক্ষাসহ কত কত মন্ত্রণালয়। অথচ লাখো ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীর আবাসনের কথা কেউই ভাববে না?

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে সিট দুর্লভ, পেলেও চলে রাজনৈতিক গঞ্জনা। বাইরের হোস্টেল ও মেসে মালিক-ম্যানেজারের কর্তাসুলভ দাপট। নারীর আবাসন মানে কিছুটা পরিসর, শৌচাগার ও অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা, কাপড় শুকানোর সুযোগ ইত্যাদি। কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসবের এক দুর্বিষহ দশা দেখা গেছে। খাবারের নিম্নমান, কিন্তু অভিযোগ করা যাবে না। রাতে দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় যানজট, কাজের চাপ বা অন্য কোনো অসুবিধা দেখা হবে না। সন্তানসমেত বসবাস করতে চাওয়া একাকী নারীকে নিজের সামর্থ্যেই নিজের ও সন্তানের বন্দোবস্ত করতে হয়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ ইত্যাদি কারণে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের ঢাকায় আসতে ও থাকতেই হয়। আবার এটি বিশ্বের ব্যয়বহুল এক নগরী। খরচ করেও নতজানু ও অপ্রতুল জীবন কাটাতে হয় হোস্টেলবাসী মেয়েদের।

আমাদের সমাজ নারীর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাদায়ক নয়। কিন্তু সরকার, প্রশাসন, প্রতিষ্ঠানের কী কাজ? খুব সহজেই সরকারিভাবে ভাড়ায় আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়। সুন্দর ও সভ্য নারী হোস্টেল নির্মাণ ও পরিচালনায় ভর্তুকি দেওয়া যায়। বড় শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা যায় ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীর শিক্ষাকালীন, কর্মকালীন থাকার ব্যবস্থা করতে।

সমাজের পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সরকার অন্তত হোস্টেল ও মেসের জন্য মর্যাদাপূর্ণ আবাসন নীতিমালা বেঁধে দিতে পারে, পরিদর্শক রাখতে পারে তদারকির জন্য। করুণ পরিস্থিতিতে পড়া মেয়েদের জন্য সরকার, প্রশাসন, প্রতিষ্ঠান কি কিছুই করবে না? এ রকম অব্যবস্থা কেবল মানসিক-শারীরিক দুর্গতিই সৃষ্টি করছে না, ছাত্রী ও কর্মজীবী মেয়েদের রাখছে বিপদের মুখে।