মশার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র

বাংলাদেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নানা রকমের সরঞ্জাম কেনাকাটার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মাত্রায় দুর্নীতি স্থায়ী চর্চায় পরিণত হয়েছে। ৩০ টাকা দামের জিনিস যদি ৩০০ টাকায়ও কেনা হয়, তা আটকানোর কেউ থাকে না। প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক গুণ বেশি দামে কোনো যন্ত্রপাতি কেনার অল্প দিনের মধ্যেই সেগুলো নষ্ট ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়লেও তার জন্য সংশ্লিষ্ট কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। যদি তা হতো, তাহলে একই রকমের ঘটনা বারবার ঘটতে পারত না। 

এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপের সময় মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটানোর জন্য তড়িঘড়ি করে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা খরচ করে যে ২৪০টি যন্ত্র কিনেছিল, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যন্ত্র কেনার পাঁচ মাসের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রতিনিধি ডিএনসিসির ১৮টি ওয়ার্ডে গিয়ে মশকনিধনকর্মী ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, এসব ওয়ার্ডে যে ৭২টি যন্ত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৯টি পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে, আর ৩১টিতে নানা ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। যন্ত্রগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে। 

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, নিম্নমানের যন্ত্র কেনা হয়েছিল জরুরি প্রয়োজনে। প্রশ্ন হলো, জরুরি প্রয়োজনে কেন নিম্নমানের যন্ত্র কেনা হয়েছে, গুণগত মানসম্পন্ন যন্ত্র কি জরুরি প্রয়োজনকালে সুলভ নয়? যাঁরা এই ক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা কী উদ্দেশ্যে নিম্নমানের যন্ত্র কিনেছেন? এই নিম্নমানের যন্ত্রগুলোর প্রতিটির জন্য দাম পরিশোধ করা হয়েছে ২ হাজার ৫০ টাকা করে। এটাই এসব যন্ত্রের প্রকৃত দাম, নাকি অনেক চড়া দামে কেনা হয়েছে, সে বিষয়ে কি কেউ কোনো খোঁজ নিয়েছিলেন? যেসব যন্ত্র ব্যবহার শুরু করার পাঁচ মাসের মধ্যেই নষ্ট ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সেগুলো এত টাকা খরচ করে কেনার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাঁধে বর্তায়। তাঁদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা উচিত; তদন্ত ও বিচার করা উচিত, শাস্তি দেওয়া উচিত।

জানা গেছে, আরও ৩০৩টি যন্ত্র চীন থেকে কিনে আনা হচ্ছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। আবারও ডেঙ্গুর মৌসুম এগিয়ে আসছে; সুতরাং এ ধরনের দায়িত্বহীনতা, ব্যর্থতা ও সম্ভাব্য দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি অবশ্যই রোধ করতে হবে।