চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-ঘেরা অরণ্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের প্রাকৃতিক অরণ্য হয়েছে বনদস্যুদের খোরাক। তারা গত চার বছরে সাত হাজার গাছ প্রকাশ্যে সাবাড় 

করেছে। এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা না হয় গাফিলতি করেছেন, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা পুলিশ কী করেছে?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অপরূপ ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে শীর্ষে। পাহাড়-অরণ্য-জলাশয় ক্যাম্পাসটিকে শুধু সুন্দরই করেনি, এই পরিবেশ অজস্র অরণ্যচারী প্রাণীরও একমাত্র আবাস। বনের গাছ রক্ষা করাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু উল্টোটাই বরং চোখ সয়ে গেছে। বেআইনিভাবে কাটা গাছের গুঁড়ি পরিবহনের জন্য বনের ভেতর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাও বানানো হয়েছে। কাটা গাছ এই রাস্তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে আসে, তারপর প্রধান ফটক পেরোলেই আর ধরার কেউ নেই, বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ভিসি রয়েছেন, প্রক্টর রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি শাখা ও নিরাপত্তা দপ্তরের কর্তারাও রয়েছেন। চার বছর ধরে তাঁরা কেউ কিছু দেখলেন না, কিছু করলেন না? ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কাটা গাছের এই ব্যবসার পাহারাদারদের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতার নামও আছে। হইচইবিহীন সুন্দর এই ব্যবস্থাপনায় প্রকৃতি ধ্বংস চলছে। ক্যাম্পাসের আশপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে একসময় ৩৫ প্রজাতির সাপ, ১৬ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৮ প্রজাতির টিকটিকি ও গিরগিটি, ২০০ প্রজাতির পাখিসহ অন্যান্য প্রজাতির বন্য প্রাণীও ছিল। ইতিমধ্যে এসব প্রাণী বনাঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে। আগে যেভাবে ক্যাম্পাসের পাশে হরিণ দেখা যেত, এখন তা দেখা যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, এভাবে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন বনের গাছ উজাড় করা কোনো গোপন বিষয় নয়। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীর নাম এসেছে, শ্রমিকেরা নিয়মিতভাবে গাছ কেটে চলছেন, আর প্রশাসনের এক কর্তা দোষ চাপাচ্ছেন আরেক কর্তাকে। এই কাঠ চুরির ব্যবসা থেকে লাভবান হচ্ছেন কতিপয় শিক্ষক, প্রশাসনের কর্তা, ছাত্রনেতা প্রমুখ। পুলিশের নীরবতা দেখে মনে করার কারণ আছে, তারাও বিষয়টা জানে।

কিন্তু কী করছে বন ও পরিবেশ বিভাগ? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও দায় এড়াতে পারেন না। প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টররাও এ ব্যাপারে নিরীহ নন, যদিও খবর প্রকাশের পর তাঁদের তিনজন পদত্যাগ করেছেন। পুরো চক্রকে দমন করা এবং গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।