নদ ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড

একটা সময় বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা বইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে রচনায় লেখা হতো ‘বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ’। কিন্তু এখন আর এ ধরনের লাইন লেখার উপায় নেই। দখল-দূষণের কারণে বহু নদ-নদী এখন মৃতপ্রায়। যেমন, মাগুরার শ্রীপুরে কুমার নদ ভরাট করে চলছে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের কাজ। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, খোদ উপজেলা প্রশাসন এ বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উপজেলা প্রশাসন কুমার নদের জায়গা ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের কাজ শুরু করে গত জানুয়ারির প্রথম দিকে। এর মধ্যেই নদের প্রায় ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থ এলাকাজুড়ে বালু ফেলা হয়েছে। এ ভরাট করা অংশ দিয়েই বয় নদের পানির প্রবাহ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কাজ কয়েক দিন বন্ধ রাখে। তারপর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার নদ ভরাট শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।

কর্মকর্তাদের এ দাবি ধোপে টেকার মতো নয়। কেননা, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ ও কুমার নদে যেখানে ভরাট করা হচ্ছে, তার ব্যবধান মাত্র কয়েক শ মিটার। এত কম দূরত্বে নদ ভরাটের কাজ চলছে আর তাঁরা কিছু জানেন না, এটা হতে পারে না। উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের ভূমিকা খুবই দুঃখজনক। প্রশ্ন জাগছে, নদ ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অংশের স্বার্থ জড়িত কি না। আমরা মনে করি, বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য নদ ভরাট এখনই বন্ধ করা উচিত। এ জন্য অন্য কোনো স্থান খোঁজা হোক।

বাংলাদেশে একসময় নদীর সংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে এখন টিকে আছে ৪৩০টি। দখল, ভরাট ও দূষণে এগুলোরও অধিকাংশের অবস্থা শোচনীয়। নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না। কারণ, নদীর সঙ্গে আমাদের পরিবেশ ও জীবন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নদী রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমরা চাই শ্রীপুরের কুমার নদসহ দেশের আর যেসব নদ-নদী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলো উদ্ধারে সচেষ্ট হবে।