মহাস্থানগড়ে ৮০০ স্থাপনা

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত। প্রতিটি জাতির জন্যই এগুলো অমূল্য সম্পদ। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, জাতিসত্তা বিকাশের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা উদ্‌ঘাটনে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে।

তেমনই একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বগুড়ার মহাস্থানগড়। কিন্তু আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এই প্রত্ননিদর্শনকে যেভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্থানীয় লোকজন সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে সেখানে প্রায় ৮০০ বাড়ি গড়ে উঠেছে। যদিও এ এলাকায় অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এগুলো তাঁদের বংশপরম্পরায় পাওয়া জমি। কাজেই সেখানে তাঁরা বাড়িঘর তৈরি করছেন। অনেক বাড়িঘর নির্মাণে পাল, সেনসহ নানা আমলে তৈরি ইটের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ব্যবহার করা হয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এভাবে বাড়িঘর নির্মাণের ফলে পুরাকীর্তিস্থলটির জৌলুশ নষ্ট হচ্ছে।

মহাস্থানগড়ে বাড়িঘর তৈরির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১০ সালে রিট করলে ওই এলাকায় অবৈধ সব নির্মাণকাজ বন্ধ এবং প্রত্নস্থল এলাকার জমি অধিগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু সে নির্দেশ স্থানীয় লোকজন মানছেন না। জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব যে সংস্থাটির, সেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলেছে। যদিও অধিদপ্তর বলছে, প্রয়োজনীয় লোকবল ও সম্পদের অভাবে অধিগ্রহণের কাজ করা হয়নি। কিন্তু আমরা বলতে চাই, এটা অধিদপ্তরের স্রেফ গাফিলতি।

এটা খুবই হতাশার বিষয় যে দেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো বরাবরই বেশ উদাসীন। তাদের এ উদাসীনতার কারণে আমরা নিজস্ব অনেক ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছি। সরকারকে এ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা তাদের কাজ ঠিকমতো করছে কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে।

মহাস্থানগড়কে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা আশা করি, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এ নগরদুর্গ রক্ষায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় খুব দ্রুত এ প্রস্তাব পাস করবে।