নির্ধারিত সময়ে হয়নি বাঁধ

হাওরাঞ্চলে ফসলডুবি নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছরই ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সর্বপ্লাবী বন্যা হাওরে ঢুকে পড়ে। ‘ধানের খনি’ জলের অতলে হারিয়ে যায়। এক ফসলি হাওর হাহাকারে ভরে যায়। লক্ষণীয়, যতবারই ফসলডুবি হয়, ততবারই এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, বাঁধে নির্মাণ ত্রুটি কিংবা সময়মতো তা সংস্কার না করা।

২০১৭ সালের ফসলডুবির পর থেকে সরকার হাওর রক্ষায় বিশেষ তৎপরতা দেখিয়ে যাচ্ছে। তার অংশ হিসেবে এ বছরও হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আশঙ্কার কথা, সরকারের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও অল্প কিছু কর্মকর্তার গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। নেত্রকোনায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু শেষ হয়নি। কাজের গড় অগ্রগতি মাত্র ৫৮ শতাংশ।

১০টি উপজেলার কৃষকদর প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল এই বাঁধের ওপর নির্ভর করে। সেখানকার বাঁধ মেরামতে এ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছে। বরাদ্দ থাকার পরও কাজ শেষ না হওয়ায় কর্মকর্তারা যেটি দেখাতে পারেন তার নাম অজুহাত। ইতিমধ্যে সেই অজুহাত তাঁরা দেখিয়েছেনও। তাঁরা বলছেন, পানি সরতে সময় লেগেছে বলে কাজ ঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি। এখন দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। এতে অনেক কৃষক আশঙ্কা করছেন, পিআইসির লোকজন বিল তুলে নেওয়ার জন্য এখন তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করবেন। এতে কাজ অতটা মজবুত হবে না। কৃষকদের এই আশঙ্কা খুবই যৌক্তিক।

মনে রাখা দরকার, হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হতো। ২০১৭ সালের বন্যায় হাওরে ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঠিকাদারি পদ্ধতি বাতিল করে পিআইসির মাধ্যমে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। এখন তারাও যদি ব্যর্থ হন তাহলে তা হতাশা ছাড়া আর কী এনে দিতে পারে? তবে খানিকটা আশার কথা, কর্মকর্তারা দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তড়িঘড়িতে কাজের মান যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেই এখন বিশেষ নজর রাখা দরকার।