সাংসদের জমি দখল

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৯৯৬ সালে মিরপুর-১১ নম্বরে প্যারিস রোডের সি ব্লকে তাদের ‘ডুইপ’ প্রকল্পের (মধ্যবিত্ত কোটা) অধীনে যে ৩২টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল, ২৪ বছর পরও প্লটমালিকেরা তা বুঝে পাননি। আইনি বাধা কাটিয়ে ওঠার পর এখন তাঁদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও কাউন্সিলর।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বরাদ্দ দেওয়ার সময় প্লটগুলোর (প্রায় ৬৪ কাঠা) জায়গায় বস্তি ছিল। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালে বস্তি অপসারণের উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি। এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াই চলে। তবে কর্তৃপক্ষ সব বাধা কাটিয়ে ২০১৬ সালে বস্তি অপসারণ করে প্লটগুলো বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। এ সময় প্লটগুলো সংরক্ষণের জন্য চারপাশে ৭ ফুট উঁচু সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্লটের মালিকেরা সেখানে বাড়ি করতে গেলে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও ডিএনসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলামের লোকজন তাঁদের বাধা দেন। তাঁরা বুলডোজার দিয়ে প্লটের সীমানাপ্রাচীর ও ভেতরের প্লটের সীমানাও গুঁড়িয়ে দেন।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জমি বা প্লট হস্তান্তর করার পর বরাদ্দপ্রাপ্তরাই এর মালিক। এ ধরনের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি বা প্লট দখলে রাখা ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু আমাদের কোনো কোনো আইনপ্রণেতা নিজেদের বরাবর আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন এবং যা খুশি করে বেড়ান। তাদের কাছে নদী কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি কোনোটাই নিরাপদ নয়। এই মিরপুরেরই আরেক সাংসদ আসলামুল হক কয়েক দিন আগে শিরোনাম হয়েছিলেন নদীর তীর দখল করার জন্য। তিনি নদীর তীর দখল করে পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিলেন। বিআইডব্লিউটিএ তাঁর অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্যারিস রোডের বরাদ্দ করা প্লটের জমি দখলের পক্ষে সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ এক অদ্ভুত আবদার তুলেছেন। তাঁর দাবি ‘বর্তমানে প্যারিস রোড ও আশপাশের এলাকায় কোনো মাঠ নেই। তাই মহল্লার লোকজন এই জায়গাটিকে মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছেন।’ অন্যদিকে প্লটমালিকেরা বলেছেন, ১৯৯৬ সালে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে প্রতিটি প্লট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করে কিনেছেন। এখন এখানে এক কাঠা জমির দাম ১ কোটি টাকা। তাই প্লটগুলোর ওপর ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছে।

প্লটমালিকদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সাংসদ-কাউন্সিলররা নিজেদের জনগণের সেবক দাবি করলেও কাজ করেন জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে। সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ যে বরাদ্দপ্রাপ্তদের অন্যত্র প্লট দেওয়ার কথা বলেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বরাদ্দ প্লট বদলের সুযোগ নেই। বরাদ্দপ্রাপ্তরাই এখন এর মালিক।

প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের ওপর সাংসদ ও তাঁর সহযোগীদের এই জবরদস্তি কেবল বেআইনি নয়, নিষ্ঠুরও বটে। ইতিমধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্ত ছয় প্লটমালিক মারা গেছেন। তাঁদের উত্তরসূরিরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অন্য প্লটমালিকেরাও অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত। যে দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন আছে, সে দেশে সাধারণ মানুষের ওপর এ ধরনের জবরদস্তি চলতে পারে না।

অবিলম্বে ৩২ জন প্লটমালিককে তাঁদের বরাদ্দ প্লটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হোক।