যশোরে ভুট্টা চাষ নিয়ে আশাবাদ

যশোর জেলার কৃষক ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং জেলার অনেক স্থানে ভুট্টা আবাদ হওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।

প্রথম আলোর শনিবারের খবর, এ বছর যশোরে ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ভুট্টা চাষ ধান চাষের তুলনায় লাভজনক। ভুট্টা চাষে খরচ কম, কিন্তু দাম ভালো পাওয়া যায়। অন্যদিকে ধান উৎপাদনে, বিশেষ করে বোরো ধান উৎপাদনে খরচ অনেক বেশি হয়, কিন্তু দাম ভালো পাওয়া যায় না। তাই কৃষক ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ভুট্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় থেকে কৃষককে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তর জেলার পাঁচ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ১০ হাজার কেজি ভুট্টা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক কৃষককে ২০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার দিয়েছে।

মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক। ভুট্টাগাছের পাতা গোখাদ্য এবং কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভুট্টা বাজারে বিক্রি করার পরও এর শুকনা গাছ ও মোচা বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ভুট্টার চাহিদা বাড়ার কথা বিবেচনা করে কৃষককে সার ও বীজ দেওয়া ছাড়াও সরকারকে ভুট্টার আবাদ বাড়ানোর ব্যাপারে আর কী কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশের প্রধান খাদ্যশস্য হচ্ছে ধান। ধান চাষ বাদ দিয়ে বেশি বেশি ভুট্টা চাষ দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এমনিতে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণসহ নানা কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে। এতে ধান উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এর ওপর যদি কৃষকেরা ধান চাষ বাদ দিয়ে বেশি লাভের আশায় ভুট্টা চাষ করেন, তাহলে তা দেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে।

উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে ভুট্টা চাষ করে সাফল্য পাওয়া গেছে। সরকারকে এ ধরনের জমিতে ভুট্টা চাষকে উৎসাহিত করতে হবে। লবণাক্ত অঞ্চলের চাষিদের কাছে খবর পৌঁছে দিতে হবে যে লবণাক্ত জমিতেই ভুট্টা চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ভুট্টা চাষ হবে নিশ্চয়ই, তবে তা ধানের উৎপাদনে যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, তা দেখতে হবে।