মাস না পেরোতেই রাস্তা নষ্ট

কোনো কিছু ভাঙলে-চুড়লে তা মেরামত করতে হয়। একে ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ বলে। দেশের অনেক ভাঙা রাস্তা সংস্কারের ধরন দেখে যে কারও মনে হতে পারে, সত্যিকার অর্থে মেরামতির জন্য নয় বরং আবার মেরামতির আবশ্যকতা নিশ্চিত করার জন্যই কাজগুলো করা হয়ে থাকে।

নাটোরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সিংড়া উপজেলার রনবাঘা জিসি থেকে বোয়ালিয়া-বামিহাল পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছেন রংপুরের ঠিকাদার খাইরুল কবির। ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকার কাজ গত মাসের গোড়ার দিকে শুরু হয়ে একই মাসের মাঝামাঝিতে শেষ হয়। এক মাসও পার হয়নি, এরই মধ্যে কার্পেটিংয়ের পাথর উঠে যাচ্ছে। যানবাহনের চাকার চাপে পিচ থেকে পাথর আলাদা হয়ে রাস্তার দুই পাশে জমতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও গর্ত হয়ে গেছে। রাস্তা আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে। ঠিকাদার দুই সপ্তাহের মধ্যে চার কিলোমিটার রাস্তার মেরামত কাজ শেষ করেছেন। খোয়া বিছানো, কার্পেটিংয়ের আগে পরিষ্কার করা ও রোলার করার কাজ ঠিকমতো করা হয়নি। যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা ভালো মানের নয়। ফলে যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। যানবাহন চলাচল শুরু হতেই ফাঁকি ধরা পড়তে শুরু করেছে।

দিন শেষে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, সরকারের তহবিল থেকে পৌনে ১ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কয়েক ব্যক্তির পকেট ভারী হলেও জনসাধারণ ভোগান্তির মধ্যেই রয়ে গেছে।

নাটোরের এই ঘটনা দেশে ঘটমান একই ধরনের সহস্র ঘটনার একটি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় সাধারণত ঝুঁকি থাকে। কারণ, ঠিকাদার ‘প্রজাতি’ প্রায়ই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে। উন্নয়নকাজ নিয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, ঠিকাদারেরা কর্মকর্তা ও নেতাদের ‘খুশি’ করতে গিয়ে প্রকল্পের অর্থ খরচ করেন বলে প্রকল্প কাজের ব্যয় কমাতে বাধ্য হন। মুনাফা করতে গিয়ে রাস্তার মানের সঙ্গে আপস করেন।

প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশকে ‘তুষ্ট’ করতে পারলেই ঠিকাদারদের বিল পাস হয়ে যায়। ঠিকাদার রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করার পর পত্রপাঠ ভেঙে যাওয়ার জন্য তাঁর দায় শনাক্ত না করে পুনর্বার তঁাকেই আবার ঠিকা দেওয়া হয়। ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও জনপ্রতিনিধিদের কায়েমি স্বার্থের খেলা চলতেই থাকে। নাটোরের সংস্কারকাজে সেই ধরনের অনিয়মের গন্ধ স্পষ্ট। তদন্ত দরকার।