গণপরিবহন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যখন বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছিল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা 

বাংলাদেশের আছে। এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের তরফে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনঘনত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বাড়তি কিছু ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত জনঘনত্বপূর্ণ বাংলাদেশে যেখানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক কাজে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন গণপরিবহনে চলাচল করে থাকেন, সেখানে গণসমাবেশ বা ভিড় এড়ানো কার্যত সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি হ্রাস করার পথ কী? স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বর্তমান বাস্তবতায় গণপরিবহন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যঝুঁকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। 

 ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের প্রায় সব গণপরিবহনই অস্বাস্থ্যকর। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হয়। এসব গণপরিবহনের আসন, ছাদ ও পাটাতন অত্যন্ত নোংরা। অনেক সময় ছারপোকা, মাছি ও মশার আনাগোনা যাত্রীদের অস্বস্তি ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাস ও লঞ্চে টার্মিনাল ও ট্রেনের স্টেশনগুলোর পরিবেশও অত্যন্ত নাজুক। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে তাই কিছু সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে চলা উচিত। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিস্তারের এই আশঙ্কার মধ্যে গণপরিবহনের জন্য কোনো গাইডলাইন বা কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ফলে যেভাবে গাদাগাদি করে লোকজন গণপরিবহনে উঠছে, তাতে ভয় থেকে যাচ্ছে। 

আমার দেখছি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সতর্কতা হিসেবে চালক-পরিবহনশ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, গণপরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে যাত্রীদের গণপরিবহনে ওঠার সময় থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা মাপা যেতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। 

একই কথা প্রযোজ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। সরকার যেহেতু মনে করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পরিস্থিতি হয়নি, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে সেখানেও কিছু গাইডলাইন মেনে চলা উচিত। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি বসতে হয়, ফলে সংক্রমণের বিপদ এখানে বেশি। আতঙ্ক না ছড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে দরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়, সেই নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদেরও সেভাবে প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতেও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ এখানে একসঙ্গে অনেকের বসবাস। 

আশার কথা, ইতালি প্রত্যাগত দুই নাগরিকসহ তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। আক্রান্ত তিনজনের দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং নাগরিকেরা সজাগ ও সচেতন থাকলে এই বিপজ্জনক ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে। আমরা বিশেষ করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই। প্রত্যেকে সচেতন হলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। আর সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন ও উদ্যোগ। সবাই যাতে তা মেনে চলে, সেটা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।