সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে ইসলামি বিধান অনুসরণ

রোগবালাই, জরা–ব্যাধি জীবনের অংশ। কখনো তা মানুষের ভুলে, কখনো পরীক্ষা বা সতর্কবার্তা হিসেবে আপতিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে–স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; এতে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের প্রতিফল তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা সৎ পথে ফিরে আসে।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)। ‘আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল–ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী”।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৬)।

আল্লাহ তাআলা মানুষের খালিক ও মালিক। তিনিই জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা। তাঁর বিধান অনুসরণই আমাদের সুরক্ষার পথ। বালা–মুসিবত ও বিপদ–আপদ উত্তরণে ইসলামে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৪৫)।

ইসলাম হলো পবিত্র বিশ্বাস ও পবিত্র জীবনযাপনের সর্বোত্তম পদ্ধতি। পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক। নামাজ আদায় করা, কোরআন মাজিদ স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করার মতো বিশেষ ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অবধারিত। ইসলামে মানসিক বা আত্মিক পবিত্রতা হলো কুফর, শিরক ও মোনাফেকি থেকে অন্তরকে মুক্ত করা। এ জন্য প্রয়োজন কালেমা তাইয়েবা অর্থাৎ পবিত্র কালেমার বিশ্বাস, পাঠ ও বাস্তবায়ন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র লোকদিগকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন তাদের, যারা অত্যধিক পবিত্রতা অর্জনকারী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)।

দৈহিক বা শারীরিক পবিত্রতার জন্য ইসলামি শরিয়তে রয়েছে অজু। ‘অজু’ আরবি শব্দ, অর্থ হলো ধোয়া; গোসল অর্থও ধৌত করা। তাই অজুকে ছোট গোসল এবং গোসলকে বড় অজু বলা হয়। পরিভাষায় অজু হলো পবিত্রতা অর্জন, বিশেষ ইবাদত সম্পাদন ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাসিলের জন্য পানি দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত–পা ধৌতকরণ এবং মাথা মাসেহ করা। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো আর পা টাখনু পর্যন্ত প্রক্ষালন করো; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হও...।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)।

অজুর ফজিলত বিষয়ে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি সব সময় অজুর সঙ্গে থাকবে, সে শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকবে ও ইমানের সঙ্গে মৃত্যু নসিব হবে। হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘অজু মুমিনের অস্ত্র।’ সর্বদা অজুর সঙ্গে থাকা একটি সুন্নত আমল। অজুর সঙ্গে ঘুমানোও একটি সুন্নত আমল; এতে ঘুমের মধ্যে শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য নতুন অজু করা সুন্নত। খাবার গ্রহণের আগে অজু করা এবং খাবার গ্রহণের সময় মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত। সব সময় অজু করার পর দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। এই নামাজকে ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ নামাজ বলা হয়; তবে নামাজের নিষিদ্ধ সময় বা মাকরুহ ওয়াক্ত হলে এই নামাজ পড়তে হবে না।

অজু দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে। অজু ইবাতের জন্য যেমন শর্ত, তেমনি অজু স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে। হাদিস শরিফে রয়েছে, যারা অজুর সুন্নত আমল করবে কঠিন হাশরের দিনে তাদের অজুর অঙ্গগুলো নূরে চমকাতে থাকবে; রাসুলুল্লাহ (সা.) তা দেখে তাদের আপন উম্মত হিসেবে চিনতে পারবেন এবং তাদের জন্য সুপারিশ করবেন।

অজু দ্বারা সওয়াব বা নেকি অর্জনের পাশাপাশি জাগতিক উপকারও রয়েছে। যেমন দৈনিক পাঁচবার নামাজের জন্য অজু করলে এবং প্রতিবার আহার গ্রহণের আগে অজু করলে নানা ধরনের ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এর বরকতে দুরারোগ্য ও কঠিন–জটিল ব্যাধি থেকে আল্লাহ হেফাজত করেন। কোরআনের বাণী, ‘তাদের মধ্যে রয়েছে এমন বান্দা, যারা পবিত্রতাকে পছন্দ করে, আর আল্লাহ তাআলা পবিত্রদিগকে ভালোবাসেন।’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ১০৮)। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পেতে পুণ্য অর্জন করতে ও জাগতিক নানান রোগবালাই থেকে হেফাজতে থাকতে যথানিয়মে অজু করা শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অতীব জরুরি ও বিশেষ উপকারী।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম–এর সহকারী অধ্যাপক