অস্তিত্বহীন কৃষকের ধান বিক্রি

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা গল্পে ভূতের দল নাপিতের বাড়িতে গোলা বানিয়ে তাতে ধামা ধামা ধান ঢেলে ভরিয়ে দিয়েছিল। এর জন্য নাপিতকে ভূতদের টাকাপয়সা দিতে হয়নি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় অতি সম্প্রতি একই ধরনের শ খানেক ভূতের উদয় হয়েছে। তবে এই ভূতেরা কোনো নাপিতের গোলায় ধান ঢালেনি। ঢেলেছে সরকারি গুদামে। এর জন্য বাজারদরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম তারা নিয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেছে।

প্রথম আলোর খবরে দেখা যাচ্ছে, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের পার শ্রীরামপুর গ্রামের ১৩১ জন কৃষক সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেছেন। কাগজপত্রে প্রায় ৯০ জনের নাম আছে। কিন্তু আদতে এসব নামের মানুষ এই গ্রামে নেই। দু-চারজনের নাম মিললেও বাবার নামে মিল নেই। বাজারে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সরকার এই ভুতুড়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনেছে। তাদের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র, কৃষক কার্ড, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত খোলা হয়েছে। গুদাম থেকে তাদের ধান বিক্রির মূল্য হিসাবে বিলও পরিশোধ করা হয়েছে।

ধান ক্রয়ের নিয়ম হলো প্রথমে কৃষকেরা আবেদন করবেন। সেই আবেদনগুলো থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হবে। এরপর কৃষক স্লিপ নিয়ে গুদামে যাবেন। সেখানে তাঁরা ধানের গুণাগুণ দেখাবেন, তারপর ধান দেওয়ার অনুমতি পাবেন। এই অনুমতির আগে তাঁকে কৃষক কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে থাকবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর। এগুলোর পর কৃষক ধান বিক্রি করবেন। এই এত কিছু করার পর ওই ৯০ জন ধান সরবরাহ করেছেন।

এত কিছু হয়ে গেছে, কিন্তু এ বিষয়ে ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, অগ্রণী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার ব্যাংক ব্যবস্থাপক, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ খাদ্যগুদাম ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এরপরও ধান সরবরাহকারী ওই ৯০ জনকে ভূত না বলার কোনো কারণ আছে?

একটি গ্রামেই যদি এত ভুতুড়ে কৃষক ধরা পড়ে, তাহলে সমগ্র জেলা এবং দেশের বাকি অংশের অবস্থা কী হতে পারে? প্রকৃত কৃষকের পেটে লাথি মেরে ভুতুড়ে কৃষকেরা যাঁদের যোগসাজশে এভাবে সরকারের টাকা চুরি করছেন, দ্রুত তাঁদের ধরে শাস্তি দেওয়া হোক।