তিন টাকায় চোখের চিকিৎসা

গ্রামাঞ্চলের যেসব হতদরিদ্র মানুষ ঠিকমতো সুষম খাবারই পায় না, তাদের অনেকের পক্ষে ভালো চিকিৎসক তো দূরের কথা, হাতুড়ে চিকিৎসককে দেখানোও সম্ভব হয় না। ভালো খবর হলো, সরকার এমন কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে এসব মানুষ এখন এলাকায় অবস্থান করেই প্রায় বিনা মূল্যে সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। 

গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে এই জেলাসহ আশপাশের ৮টি জেলার ২০টি উপজেলার মানুষের চোখের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায়। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীদের এই ধরনের চিকিৎসা নেওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রোগীরা বহির্বিভাগে তিন টাকা দিয়ে টিকিট নেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত নার্স যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাদের প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অনলাইনে রোগীকে নিবন্ধন করে তার যাবতীয় বিষয় অনলাইনে গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সেখানকার চক্ষুবিশেষজ্ঞ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে কথা বলেন। কথা শেষ হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই চিকিৎসক অনলাইনে ব্যবস্থাপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল আই কেয়ার বিভাগ এটি পরিচালনা করে। গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, বাগেরহাট, মাদারীপুর ও পিরোজপুর জেলার ২০টি উপজেলার মানুষকে এভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সাধারণ রোগীদের অনলাইনেই ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। আর গ্লুকোমা, কর্নিয়া আলসার, ছানিসহ জটিল রোগের জন্য ওই চিকিৎসকেরা রোগীদের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে ওই ২০টি উপজেলার ভিশন সেন্টারের জন্য আলাদা কাউন্টার আছে। ওই হাসপাতালে চোখের অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। 

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে তিন-চারজন চিকিৎসক প্রতিদিন নিয়োজিত থকেন ভিশন সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। এই ভিশন সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসা, যাবতীয় ওষুধ ও চশমা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগ অকুণ্ঠ প্রশংসার দাবি রাখে। এর মাধ্যমে চিকিৎসা খাতে একটি বিরাট পরিবর্তনের আভাস মিলছে। তবে এ ব্যবস্থাকে সর্বাত্মক সফল করতে ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়াকে অনিয়মের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। এর জন্য জোরালো প্রশাসনিক নজরদারি জরুরি।