করোনাভাইরাস: সামনে কঠিন সময়

ইতালি করোনা মোকাবিলা করছে লকডাউন পদ্ধতিতে। ছবি: রয়টার্স
ইতালি করোনা মোকাবিলা করছে লকডাউন পদ্ধতিতে। ছবি: রয়টার্স

এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আদর্শ দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রদত্ত সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের বক্তৃতা থেকে জানা যায়, তাঁরা করোনাভাইরাস–উদ্ভূত সমস্যাকে তিনভাবে মোকাবিলা করেছেন। প্রথমত, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, চিকিৎসা ও রোগের বিস্তার রোধ করা, দ্বিতীয়ত, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করা; এবং সবশেষে জনগণকে নিয়ে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে।

আক্রান্তদের চিহ্নিত, চিকিৎসা ও রোগের বিস্তাররোধ 

চীনের সঙ্গে নিবিড় বাণিজ্যিক ও সামাজিক সম্পর্কের কারণে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উহান ফ্লু (কোভিড-১৯) সিঙ্গাপুরে হানা দেয়। করোনাভাইরাস রোধে এখন পর্যন্ত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের অনুসৃত পদ্ধতি হলো আক্রান্তদের ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, দ্রুত টেস্টিং কিট প্রস্তুত করে তা সব বিমান, জল ও স্থলবন্দরে স্থাপন করা হয় এবং সবাইকে কোয়ারেন্টিন করা হয়। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে ব্যক্তিটি আক্রান্ত নয়, এটা নিশ্চিত করেই কেবল দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। হাসপাতালগুলো থেকে সাধারণ রোগীদের সরিয়ে সেখানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 

অন্য দুটি পদ্ধতি হলো ইতালি অনুসৃত লকডাউন, অর্থাৎ পুরো জনগোষ্ঠীকেই ঘরে আবদ্ধ করে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা এবং যুক্তরাজ্য প্রস্তাবিত যূথবদ্ধ সংক্রমণ-মুক্ততা (হার্ড ইমিউনিটি) সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর উদ্যোগ না নিয়ে বহুসংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত হতে দেওয়া এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের মুক্ত করা, যার ফলে ভাইরাসের বিস্তার রোধ হবে। খোদ বিলাতেই এ পদ্ধতির সমালোচনা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর অনুসৃত পদ্ধতির ফলে সে দেশে মাত্র ২১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে ইতালিতে বহুসংখ্যক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে। যুক্তরাজ্যে রোগটির সংক্রমণ বাড়ছে এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই করোনাভাইরাস–উদ্ভূত আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাজেটে বিশেষ সহায়তা ও স্থিতিশীলতা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে এ জন্য চার বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসও এক বিলিয়ন ডলারের খাদ্য সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। বিশাল অঙ্কের সহায়তা প্রস্তাব তাদের সংসদে বিবেচনাধীন রয়েছে। জাপানে সহায়তার পরিমাণ চার বিলিয়ন ডলার। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা মোকাবিলা করছে। সরাসরি সহায়তা ছাড়াও আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার কমানো, এমনকি শূন্য করা হয়েছে।

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরোধ

সংকট শুরুর প্রথম থেকেই সিঙ্গাপুর সরকার তাদের জনগণকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয় যে তারা বিষয়টি পুরো নজরদারি করছে, এবং এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা সংকটকে স্বীকার করে নেয়। জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে আক্রান্ত না হলে মাস্ক পরিধানের অথবা সুপারমার্কেটে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব হবে—এমনটি ভাবার প্রয়োজন নেই। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ইমিগ্রেশন, আমলা, সরকারি, বেসরকারি পরিবহন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবাইকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিয়োজিত করতে সক্ষম হয়। এবার এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা, উদ্যোগ কী, আরও কী করা প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

জনস্বাস্থ্য সমস্যা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে কোভিড-১৯–কে মহামারি (প্যানডেমিক) বলে বর্ণনা করেছে এবং এর বিস্তৃতির প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ দেশই এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। শুধু তা–ই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ জন্য কতিপয় দেশের ‘উদ্বেগজনক পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব’-কে দায়ী করেছে। আমেরিকানরাও প্রথমে এটাকে চীনা ও এশীয় সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি হতে পারে না—এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে সাধারণ ফ্লুর মতো এটা কেটে যাবে বলে ভাবে। ফলে অরক্ষিত বন্দরগুলোর মাধ্যমে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের আগমন বাড়তে ও এটা সংক্রমিত হতে থাকে। এখন তাদের টনক নড়েছে। সর্বাত্মকভাবে তারা এখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে।

বাংলাদেশেও এ ধরনের একটা উন্নাসিকতা কাজ করছে। চীনারা সাপ, ব্যাঙ, বাদুড় যা পায়, তা খায়, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত অজু করি—এসব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অজুহাতে আমাদের এসব রোগ হবে না, আমাদের দেশে তাপমাত্রা বেশি—এই সব ভেবে একশ্রেণির লোককে একটা আত্মপ্রসাদে ভুগতে দেখা যায়। কিন্তু ভাইরাস এমন একটা জিনিস যা জাতি, ধর্ম, পেশা, সামাজিক অবস্থান, নেট ওয়ার্থ, কিছুরই বাছবিচার করে না। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী–পত্নী (কানাডা ও স্পেন) ও খোদ ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাদ পড়েননি পর্দার তারকা টম হ্যাঙ্কস ও মাঠের তারকা ড্যানিয়েল রুগানিসহ অনেকে। 

মহামারি ঠেকানোর একমাত্র পথ হলো এটা ও এর ব্যাপকতাকে স্বীকার করে নেওয়া। যেহেতু কোভিড-১৯ বিদেশপ্রত্যাগত যাত্রীদের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই দেশের বিমান, স্থল, সমুদ্রবন্দরগুলোতে নজরদারি করতে হয়। সুস্থ ও অসুস্থ যাত্রীদের আলাদা করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করতে হয়। আমাদের গাফিলতির কারণে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ কেউ দেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে। সরকারি কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে বিদেশপ্রত্যাগতরা বিক্ষোভ করেছেন। গৃহবন্দিত্বের নির্দেশপ্রাপ্তদের কেউ কেউ এখন সাজেক ভ্যালি, এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আড্ডায় ও আপ্যায়নে ব্যস্ত! অভিভাবকদের উপর্যুপরি দাবি সত্ত্বেও অনেক দীর্ঘসূত্রতার পর ছাত্রছাত্রীদের বয়কটের মুখে অবশেষে স্কুল–কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো সবই আমাদের উদাসীনতা, সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাব ও সিদ্ধান্তহীনতার নিদর্শন। আশা করি, শিগগিরই এর অবসান ঘটবে।

দেশের হাসপাতালগুলো মহামারি বড় আকার ধারণ করলে এর চাপ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সর্বোচ্চ কতজনের রোগ শনাক্ত করতে পারবে, চিকিৎসা প্রদান করতে পারবে? এ ছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক টেস্ট কিট, ফ্রন্টলাইনের ডাক্তার, নার্সদের প্রতিরক্ষণ মাস্ক ও অন্যান্য সামগ্রী আছে কি না, তা–ও ভাবার বিষয়। সরকারের হাতে মাত্র ১ হাজার ৭৩২ টেস্ট কিট আছে বলে জানা গেছে! এখন থেকে আরও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে এ প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। চিকিৎসাসামগ্রী দেশে তৈরি ও আমদানি করে পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলতে হবে।

আর্থিক সমস্যা

দেশে বিদ্যমান আর্থিক সংকটের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে কোভিড-১৯ সৃষ্ট আর্থিক সমস্যা। প্রবাসীরা দলে দলে দেশে ফিরছেন। কবে তাঁরা ফিরে যেতে পারবেন, কেউ তা জানে না। আজ হোক, কাল হোক প্রবাসী রেমিট্যান্সের ওপর এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। বণিক বার্তা প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে দেশের রপ্তানি গন্তব্যের সব দেশই মহামারিতে আক্রান্ত। তালিকার ১০টি দেশে আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৭০ শতাংশ যায়। সেসব দেশে আয় কমলে আমাদের রপ্তানিপণ্যের চাহিদা কমাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কয়েকটি খাত, বিশেষ করে হোটেল, বিমান চলাচল, সেবা খাত, গিগ ইকোনমি যেমন, স্বতন্ত্র ঠিকাদার, হোটেল–রেস্তোরাঁয় কর্মরত চুক্তিভিত্তিক, অস্থায়ী কর্মচারী, এরা বিরূপ আর্থিক অবস্থায় পড়বে। সরাসরি না হলেও দেশের কেউ এর প্রভাবমুক্ত থাকবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, আমদানি–রপ্তানি কমে গেলে রাজস্ব আদায়েও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। শেয়ারবাজারের অবিরাম পতনের মধ্যেও সংকটের চিত্র স্পষ্ট।

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সংকট

আমাদের সরকার কিংবা জনগণ কেউ আসন্ন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়। অনেকেরই মধ্যে কিছু হবে না, এমন একটা ভাব। আবার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যম ও বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে সেসব দেশে যা ঘটছে, তা জেনে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। উদাসীনতা বা আতঙ্ক কোনোটাই সমস্যার সমাধান নয়। অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ হবে না। আবার ভয় পেয়ে সবকিছু ছেড়ে ঘরে আটকে থাকলেও চলবে না। অর্থনীতির কাঁটাও সচল রাখতে হবে।

করণীয় কী

প্রথমেই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সমস্যা যে গুরুতর, তা স্বীকার করে নিতে হবে। সমস্যা মোকাবিলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে। দেশের প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। আক্রান্ত ও তারা যাদের সংস্পর্শে এসেছে, তাদের শনাক্ত করে চিকিৎসা ও নজরবন্দী করতে হবে। আক্রান্তদের সেবা স্বাস্থ্যকর্মীরাই দেবেন, তাঁদের তৈরি করতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য পর্যাপ্ত পার্সোনাল সেফটি ইকুইপমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্তসংখ্যক টেস্ট কিট সংগ্রহ করতে হবে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের আর্থিক প্রভাব ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট অপেক্ষা ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাই রোগ মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে। রোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর রাখতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। ইতিমধ্যেই আমেরিকান এয়ারলাইনসগুলো সরকারের কাছে ৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসজনিত কারণে কেবল বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করায় এক মাসে কলকাতা শহরের ক্ষতি হবে ৪৪০ কোটি রুপি। আমাদের দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং সেখানে কর্মরত দরিদ্র কর্মচারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁদের সাহায্যে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য অবিলম্বে স্বাস্থ্য খাতের সংকট ও আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রথম পর্যায়ে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি সহায়তা তহবিল ঘোষণা করা যেতে পারে। টাকার অঙ্কটি প্রয়োজনের তুলনায় মোটেই বড় নয়। সরকারের বাজেট ও উন্নয়ন প্রকল্পের অপচয় কমিয়ে এর সংস্থান করা সম্ভব।

সর্বোপরি প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে জনগণকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পৃক্ত করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তা কীভাবে করতে হবে, রাজনীতিবিদেরা তা নির্ধারণ করবেন। আশা করব, বাংলাদেশ যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লিখিত ‘উদ্বেগজনক পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব’ এমন দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত না হয়, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাবেক সচিব ও প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইডকল