পেঁয়াজ আমদানি

গত ছয় মাস বাংলাদেশের মানুষ পেঁয়াজের চড়া দামের মাশুল দিয়েছে, এখন পড়তি দামের মাশুল দিতে হচ্ছে কৃষককে। পেঁয়াজের দাম কমা ও বাড়া মোটামুটি ভারতের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দাম সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। সম্প্রতি ভারতের বাজারে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত হওয়া শুরু হলে তারা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। একই সময় বাংলাদেশেও নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসে, ফলে পেঁয়াজের দাম সহনীয় মাত্রায় এসে ঠেকে; কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দেশের কৃষকের পেঁয়াজের দাম আরও কমে গেলে দেশের কৃষকের যে ক্ষতি, তার সমাধান কী?

সংকটের সময় পেঁয়াজের চড়া দাম দেখে লাভের আশায় কৃষকেরা এবার বেশি জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন। সংকটের সময় সরকারও পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিল। বাণিজ্যমন্ত্রীও একাধিকবার কৃষককে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কৃষকেরাও সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশি হারে পেঁয়াজ উৎপাদন করে জাতির প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছিলেন, কিন্তু যাদের ভরসায় তাঁরা এটা করলেন, তারা কি এখন কৃষকের লোকসান ঠেকাতে এগিয়ে আসবে না?

ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সময় পেঁয়াজের দাম উঠেছিল কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর এখন বাজার খুলে দেওয়ার পর গ্রামের বাজারে পেঁয়াজের দাম নেমেছে ২৫–৩০ টাকায়। দামের এই চরমভাবাপন্নতায় ভোক্তারও ক্ষতি, কৃষকেরও ক্ষতি। পেঁয়াজের দাম ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থের দিকে খেয়াল রেখে ঠিক করা উচিত। এ বছর পেঁয়াজচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরের বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবেন। তখন আবার ঘাটতিতে পড়তে হতে পারে। বিদেশের বাজারের প্রতি টানা নির্ভরশীলতাও কোনো কাজের কথা নয়। তা ছাড়া যে কৃষক পেঁয়াজে স্বয়ংস্বম্পূর্ণতার আশা জাগাচ্ছেন, পুরস্কারের বদলে কেন তাঁরা বাজারের কাছ থেকে তিরস্কার পাবেন? খেয়াল করা দরকার যে বাজারে আসা দেশি পেঁয়াজের বর্তমান জাতটি সংরক্ষণ করা যায় না। দাম কম দেখে পেঁয়াজ ধরে রাখার সুযোগ কৃষকের নেই।

যেহেতু বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই, দামও সহনীয়, সুতরাংআমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়িয়ে চাষিদের বিপদে ফেলা যাবে না। আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজচাষিদের সুরক্ষার যে দাবি উঠেছে কৃষকদের তরফ থেকে, সরকারের উচিত তা আমলে নেওয়া।