ইউএনওর সৃজনশীল উদ্যোগ

করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। তাই এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর প্রথম উপায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো। বাংলাদেশে এই রোগ এসেছে বিদেশ থেকে। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা নিজের অজান্তে নিজের দেহে এই ভাইরাস বহন করে এনেছেন, তাঁদের সংখ্যা কত, তা কারোরই জানা নেই। গত দুই সপ্তাহে প্রায় দুই লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। তাঁরা সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। এভাবে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই অবস্থায় বিদেশফেরত ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনেকেই মানছেন না; পাড়ার চায়ের স্টলে আড্ডা দিচ্ছেন বা হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ প্রশাসনের লোকজনের হাতে ধরা পড়ে জরিমানা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই-একটি জায়গায় কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। আবার সংখ্যায় কম হলেও অনেকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার চেষ্টা করছেন। তাঁদের জন্য এক সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা খাতুন। যেসব বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তিনি তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই উপহার দিচ্ছেন। তাঁর উপজেলায় ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৮ জন মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন; তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনকেই তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন; তাঁদের মধ্যে ৩৭ জনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই উপহার দিয়ে এসেছেন।

একজন ইউএনওর এই উদ্যোগকে আমরা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি এবং তাঁকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ, জেল-জরিমানা কিংবা রূঢ় ব্যবহারের মাধ্যমে সব মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার মতো কাজে বাধ্য করার চেষ্টা ফলপ্রসূ হওয়া কঠিন। বই উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ইউএনওর সেই মনোভঙ্গিরই প্রকাশ ঘটেছে। তিনি চাইছেন, বিদেশফেরত ব্যক্তিরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে উদ্বুদ্ধ হোক। যাঁরা তাঁর হাত থেকে বই উপহার গ্রহণ করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আনন্দিত হয়েছেন, সাময়িকভাবে নিজেকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন।

আমরা আশা করব, সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে এই ধরনের নানা সৃজনশীল পন্থায় বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।